Wednesday, February 13, 2013

আজও রক্তে ভেসে যাচ্ছে জমিন!আজও লজ্জিত মানুষ!আজও ধর্ষিতা মায়েরা!কিন্তু এই বাংলায় কোনো লজ্জা লেখা হবে না! রোজ টিভি দেখতে ভয় হয়, আবার কোথায় রক্তপাত হল !আবার আাদেরই কে মারা পড়ল! কোন মেয়েটি াবার ধর্ষিতা হল! পলাশ বিশ্বাস

আজও রক্তে ভেসে যাচ্ছে জমিন!আজও লজ্জিত মানুষ!আজও ধর্ষিতা মায়েরা!কিন্তু এই বাংলায় কোনো লজ্জা লেখা হবে না! রোজ টিভি দেখতে ভয় হয়, আবার কোথায় রক্তপাত হল !আবার আাদেরই কে মারা পড়ল! কোন মেয়েটি াবার ধর্ষিতা হল!

যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ এখন প্রতিবাদ 

মুখর। হাজার হাজার তারুণ্যের প্রতিবাদ মুখর স্লোগানে 


উত্তপ্ত ঢাকার শাহবাগ চত্বর। সবার কেবল একটাই দাবী 


যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসিচাই। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে 


চাই। পশ্চিম বাংলা ও বারতবর্ষের যুদ্ধ অপরাধীদের 


বিরুদ্ধে আমরা কবে রাস্তায় নামতে পারব?

পলাশ বিশ্বাস
যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে স্লোগান দিচ্ছে দুই শিশু
যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে স্লোগান দিচ্ছে দুই শিশু
 রাজাকারে ফাঁসি চাই। আমার জামাত শিবির রাজাকার 


এই মূহুর্তে দেশ ছাড়। একাত্তুরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক 


আরেকবার। রাজাকারের গতি নাই, ফাঁসি ছাড়া উপায় 


নাই জ্বালো জ্বালো আগুন .... আমরা আর চাইনা এই 


মাটিতে যুদ্ধ অপরাধীদের গাড়িতে বাংলার পতাকা উঠুক। 




এখন আওয়ামীলীগ এর জন্য সবচেয়ে বড় প্রশংসনীয় 


কাজ হবে, যদি তারা নিজ দলেরঅপরাধীদের দিয়ে বিচার 


উদ্ভোধন করে।তাহলে জামায়াত ও আর এটা নিয়ে 

রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। তাই আমরাও বলতে 

চাই যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চাই ।তা যে দলেরই হোক না 

কেন ? 


আজ মহাবোধি সোসাইটি হলে কলেজ স্কায়ার কোলকাতায় সন্ধ্যা ছ টায় ওবিসি , আদিবাসিদের ও দলিতদের বিরুদ্ধে আশিস নন্দীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ধিক্কার সভা হয়ে গেল!আমরা বেশ ভালো করে জানি বাংলার অচলায়তন ভাঙ্গতে মনুস্মৃতি কর্তৃত্বকে আঘাত করতে নিজেদের অধিকারের দাবিতে বাংলায় বহুজন সমাজ গঠনের কাজ শুরু হতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে৤ওপার বাংলা আবার জাগ্রত ইসলামী বাংলাদেশী জাতিয়তার বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতিসত্তার লড়াইয়ে রাস্তায়  নেমেছে সারা বাংলা দেশ!অথচ এপার বাংলায় বাঙ্গালিত্ব বলতেই বোঝায় ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক আধিপাত্য!এই আধিপাত্যর দরুণ আশিসনন্দীর বক্তব্য নিয়ে, ওবিসি, উপজাতি ও তফসিলীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে এখনই কোন বিতর্ক এই বাংলায় হবে না, যেখানে আড়াআড়ি পক্ষ বিপক্ষে বিভক্ত জনমানসে তৃতীয় পক্ষের কোনও সুযোগ নেই!যেমন সুযোগ নেই সমতা, সামাজিক ন্যায়, আইনের  শাসন ও গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতার!বাংলাদেশে চরম আক্রমনের মুখেও জাগ্রত বাঙ্গালি জাতি সত্তা, তাই বাংলাদেশী ইসলামী জাতীয়তার জিগির সত্ত্বেও সেখানে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবেশ কখনো নষ্ট হয়নি!পৃথীবীর আর কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের নাগরিক মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবিদের আত্মবলিদানের নজির নেই!অথচ বাংলায় অন্য পক্ষ, বহুজনসমাজের কোনও কথা কোথাও বলার লেখার সুযোগ নেই!মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে লক্ষ লক্ষ প্রামের বিনিময়ে ভূমিষ্ঠ হয় বাংলাদেশ!আসামের  কাছাড়েও বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিরা!পশ্চিম বাংলার সেই ইতিহাস নেই!ভারতের রাষ্ট্রপতি বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ সন্তান, হিন্দুত্ভের সর্বোচ্চ ধর্মাধিকারি, চন্ডী পাঠ দিয়ে যার দিন শুরু হয় আর রাষ্ট্রপতি ভবনকে যিনি চন্ডীমন্ডপে পরিণত করেছেন!ভারতের রাজনীতিতে পশ্চিম বাংলার কর্তৃত্ব প্রবল!কিন্তু তাঁদের কেউই বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি তোলেন নি!উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতেই তাঁরা বরং  সর্বদলীয় সম্মতিতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ করেছেন, চালূ করেছেন আধার যোজনা!বাংলার বাইরে বাঙ্গালিরা সংরক্ষণ থেকে বন্চিত!তাঁদের নাগরিকত্ব ওবং একমাত্র তাংদেরই নাগরিকত্ব সন্দিগ্দ্ধ!এই পশ্চিম বাংলায় সন্দিগ্দ্ধ নাগরিকত্বের অজুহাতে লাখো লাখো উদ্বাস্তুর নাম ভোটার লিস্ট থেকে কাটা হল , প্রতিবাদ হয়নি!তিন দশক ব্যাতীত দন্ডকারণ্য থেকে নির্বাচনী অঙ্কের খাতিরে ডেকে এনে বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের মরিচঝাঁপিতে কোতল করা হল!মায়েরা ধর্ষিতা হলেন!শিসুরা অনাথ হল!রক্তে ভিজে গেল মাটি!প্রবল ভাবে স্থানীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার লঢ়াইয়ে আমরা ওরাঁয় দ্বিধা বিভক্ত নাগরিক সুশীল সমাজ তিন দশকেও মুখ খোলেনি!বাংলার বাইরে বাঙালিদের মাতৃভায়ার অধিকারের দাবিতে সরব হয়নি!তাঁরা মাত্র বাংলার বাইরে পাঁচ লক্ষ উদ্বাস্তু আছে, এই কথা বলে কোটি কোটি বাঙ্গালির অস্তিত্ব অস্বীকার করতেই অভ্যস্ত!একশো বছর যাদের ক্ষমতায়ন হয়নি, হুর্নীতি প্রসঙ্গে তাংদের কথা বলে বড় মুশকিলে ফেলে দিয়েছেন শাসক শ্রেনীকে সমাজবিজ্ঞানী আশিসনন্দী, তাই ঘটা করে জানিয়ে দিতে হল তিনি জাতে তেলী, নবশাঁখ! অর্থাত তাঁর কথাকে, তাঁর দেওয়া তথ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না!আজও রক্তে ভেসে যাচ্ছে জমিন!আজও লজ্জিত মানুষ!আজও ধর্ষিতা মায়েরা!কিন্তু এই বাংলায় কোনো লজ্জা লেখা হবে না! রোজ টিভি দেখতে ভয় হয়, আবার কোথায় রক্তপাত হল !আবার আাদেরই কে মারা পড়ল! কোন মেয়েটি াবার ধর্ষিতা হল!

প্রতিবাদের এক অন্য ভাষা দেখাল বাংলাদেশ। নীরবতার মাধ্যমে যুদ্ধঅপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়েত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেন অগণিত মানুষ। মঙ্গলবার বিকেল চারটে থেকে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিন মিনিট নিরবতা পালন করেন বহু মানুষ। তবে শান্তিকামী এই আন্দোলনে পাশাপাশি হিংসারও সক্ষী থাকল মঙ্গলবারের ঢাকা। জামায়েতে ইসলামির পাল্টা মিছিলে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা।


 "সারাদেশে একাত্তরের চেতনার উত্তাল ঢেউ জেগেছে। জেগে উঠেছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। তাকে স্বাগত জানাই। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্ম জাতিকে আশাবাদী করেছে। যে কোনো মূল্যে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।"

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

এ কনভোকেশনে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রেজোয়ান খানের সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা মির্জা আজিজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিস-এর চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, "জামায়াতে ইসলামী ও তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘ (বর্তমান ছাত্র শিবির) একাত্তরে দেশজুড়ে খুন-হত্যা, গুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ চালিয়েছে। তারা আমাদের দেশমাতৃকাকে করেছে কলঙ্কিত। স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।"

তিনি বলেন, "আজ আবার তারা সেই পুরোনো কায়দায়  হিংসার নখর তুলে দেশকে ক্ষত-বিক্ষত করতে উদ্যত। আজকের প্রজন্মের বিপথগামী কিছু শিক্ষার্থী ওইসব ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের নষ্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।"

নাহিদ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিবির কর্মী-সমর্থকদের জামায়াতের ঘৃণ্য রাজনীতি ছেড়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবগাহন করে সুস্থ ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদার সাম্প্রদায়িক নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মুক্তবুদ্ধির সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পরামর্শ দেন।


মঙ্গলবার বিকেল চারটে। নীরবতা ছিল প্রতিবাদের ভাষা। যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসি ও  জামাতে শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই কর্মসূচীর ডাক দিয়েছিল শাহবাগের আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার বেলা চারটে বাজতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তিন মিনিট নিরবতা পালন করে এই আন্দোলনে নিজেদের সমর্থন জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় সর্বত্রই তিন মিনিট নিরবতা পালিত হয়। 

গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাতের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। এই রায় প্রত্যাখান করে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশের যুব সমাজ। অন্যদিকে মঙ্গলবার ঢাকার রাজপথে মিছিল করে জামাতে ইসলামি। ট্রাইবুনাল ভেঙে দেওয়া ও আব্দুল কাদের মোল্লাসহ দোষীসাব্যস্ত নেতাদের মুক্তির দাবি জানায় তারা। এর পরেই পুলিসের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। অশান্ত হয়ে ওঠে মতিঝিল, করওয়ান বাজার এলাকা। 




যদিও সে  সময় উল্টো ছবি ছিল শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। স্তব্ধতার মিছিলে লাখ মানুষের উপস্থিতিতে আরও জোরালো হয়েছে প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাতটায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ফের প্রতিবাদ জানাবেন আন্দোলনকারীরা।


ইশতিয়াক হুসাইন, সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও ইসমাইল হোসেন
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গণজাগরণ চত্বর থেকে: শাহবাগের তরুণ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সারাদেশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় একযোগে দেশব্যাপী এ কর্মসূচি পালিত হবে। এদিন যে যেখানে যে অবস্থায় থাকবেন সে অবস্থায় একটা করে মোমবাতি জ্বালাবেন।   

শাহবাগের আন্দোলনের আয়োজকরা জানান, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যে যেখানে আছেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সন্ধ্যা ৭টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে দাবির প্রতি একাত্মতা জানাবেন। এটা হবে প্রতিবাদের আরেকটি ভাষা। যে ভাষায় সারাদেশে অন্ধকারের অপশক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অন্ধকার ঠেলে আলোয় জ্বলে উঠবে সারাদেশের মানুষ।  

মঙ্গলবার দেশব্যাপী তিন মিনিটের স্তব্ধতা কর্মসূচির আদলেই বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে যে যেখানে থাকবেন তাদের সবাইকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানানোর আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের বুধবার ছিল অষ্টম দিন। এই আন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে।প্রতিদিনই যেনো বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা।

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এই বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ আন্দোলনে যোগ দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। এতে যোগ দেয় লাখো জনতা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে বলেও গেঅষনা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। 

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩
আইএইচ/এমআইএইচ/ সম্পাদনা: জয়নাল আবেদীন, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর


রবীন্দ্র সরোবর থেকে: 'বাসন্তীর আগুনে পুড়ে যাক রাজাকার' এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হলো ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের বাসন্তী উৎসব ১৪১৯।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের ত্রিপুরার একদল চৌকস নৃত্যশিল্পীর মনোমুগ্ধকর নৃত্যে ছিল শেষ পরিবেশনা।

বুধবার দিনব্যাপী বাসন্তী উৎসবের তিন পর্বের শেষ পর্ব রবীন্দ্র সরোবরে রাত ৮টায় শেষ হয়। স্বাধীনতার ৪২বছর পর এই প্রথম বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বাঙালির প্রাণের 'বাসন্তী উৎসব'-এ একাত্মতা প্রকাশ করলো।

এছাড়া বাসন্তী উৎসবের ১৮ বছর পর এবারই প্রথম একটি আধিবাসী সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে একটি নৃত্য পরিবেশন করে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের একটি নৃত্য সংগঠন বাংলার মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে এসেছে বাসন্তী উৎসবে প্রাণের এ স্পন্দনে যোগ দিতে।

জাতীয় বসন্ত উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিকার স্থপতি কাজী আরিফ সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, "বাসন্তী উৎসব পালন করা হয় আজ ১৮বছর। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।"
 
নৃত্য পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহারাজ সাহা বলেন, "আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি সব কিছু ভালোবাসি।"

তিনি বলেন, "একটি সংগঠনের আমন্ত্রণ পেয়েই ১৮ সদস্যের একটি নৃত্যদল নিয়ে চলে এসেছি। বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় উপস্থিত থেকে আপনাদের সামান্য আনন্দ দিতে পেরে আমরা গর্বিত।"

এসময় তিনি ভারতের পক্ষ থেকে বাঙালির এ মিলন মেলায় আগতদের শুভেচ্ছা জানান।

এর আগে, রবীন্দ্র সরোবরে বাংলার প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মহাদেব ঘোষের রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। একে একে বিভিন্ন সংগঠন থেকে একক ও দলীয় নৃত্য, ছড়া, গান পরিবেশন করা হয়।

এবারের বাসন্তী উৎসবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল আছিক কালচারাল একাডেমির শিশুদের আদিবাসী নৃত্য। অন্য কোনো বছর কোনো আধিবাসী গান বা নৃত্যের আয়োজন ছিল না।

একটি আদিবাসী গানের সঙ্গে নৃত্যে সরোবর এলাকা মুখরিত হয়। সবশেষে আয়োজকরা জানান, বাসন্তী উৎসব প্রতিদিন বাঙালির জীবনে ফিরে আসুক এটি আমাদের প্রত্যাশা।

দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরত সবার প্রতি আজকের বাসন্তী উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে। এবারের বাসন্তী উৎসব শুধু আনন্দের নয় প্রতিবাদেরও।  

শেষে রবীন্দ্র সরোবর থেকে হাজারো কণ্ঠে আওয়াজ উঠে,'জয় বাংলা। বাসন্তীর আগুনে পুড়ে যাক রাজাকার'।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩


একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় কাদের মোল্লাসহ অন্য অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। শাহবাগ স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন আজ অষ্টমদিনে পড়ল। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।  নিজেদের দাবিকে জোরদার করতে ফেসবুকের মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকেও হাতিয়ার করেছেন  আন্দোলনকারীরা।     

ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ার। গত সাতদিন ধরে যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকার এই রাস্তাতেই জমায়েত চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিদিনই বাড়ছে জমায়েতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা। জোরালো হচ্ছে কাদের মোল্লাসহ অন্য অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি। 

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সোমবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন মন্ত্রিসভার সদস্যেরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এই বৈঠকে। আইন সংশোধন হলে কাদের মোল্লাসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে সরকার। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরাও। 

নিজেদের দাবির সমর্থনে ফেসবুকের মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও জনমত গড়ে তুলছেন  আন্দোলনকারী। আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন ব্লগেও ভালই সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা।


বাজেট অধিবেশনের আগে আজই বৈঠকে বসতে চলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। 

২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। এবারের অধিবেশনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। জমি অধিগ্রহণ সংশোধন বিল, খাদ্য নিরাপত্তা বিল, ধর্ষণ বিরোধী আইন কঠোর করা সহ আরও কয়েকটি বিল পেশ করতে চায় কেন্দ্র। সেই বিল পেশ এবং পাশ করানো সরকারের কাছে বেশ জরুরি।  

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস। শীতকালীন অধিবেশনের আগে আজমল আমির কসাভের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল কেন্দ্র। এবার সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরুর ফাঁসি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। 

এই সামগ্রিক পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে বিরোধী আত্রুমণের কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে। বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে আজকের বৈঠকে। 

ছাব্বিশ এগারোয় আজমল কাসাভ; সংসদ হানায় আফজল গুরু। দু`জনের ফাঁসির আদেশ বহাল করার পর ফের আরেক বার কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। কুখ্যাত চন্দন দস্যু বীরাপ্পনের চার সহযোগীর প্রাণ ভিক্ষার আবেদন বুধবার খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি। 

কর্ণাটকে ল্যান্ডমাইন্ড বিস্ফোরণে অভিযুক্ত চার বীরাপ্পন সহচরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। অভিযুক্তের তরফের আইনজীবী এস বালমুরুগান বলেন, "বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জেনেছি, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত বেলগাউম জেল কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।" এই সিদ্ধান্তের কথা আসামীদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বালামুরগান। 

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের অক্টোবরেই তামিলনাড়ুতে পুলিসি এনকাউন্টারে মারা যান বীরাপ্পন। তাঁর চার সহযোগী জ্ঞানপ্রকাশম, সিমন, মীসেকর মাদাইয়া এবং বিলাভেন্দ্রনকে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফাঁসির আদেশ শোনায় সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯৩-এ কর্ণাটক সীমান্তে যে ল্যান্ডমাইন্ড বিস্ফোরণ হয়, তাতে প্রাণ হারান ২১ জন পুলিসকর্মী। ওই ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড ছিলেন এই চার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। 

ধর্ষিতা মা-রক্তে ভেজা মাটি-লজ্জিত মানুষ 
পিস্তল হাতে জাপ্টে ধরা খুনিকেও টিএমসি নেতাদের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল পুলিশ সহকর্মী! এ ঘটনায় প্রমান হয়ে গেল সমাজবিরোধীদের হাতে শাসন ক্ষমতা চলে গেলে আইনের রক্ষকেরাও কতটা নিরুপায় হয়ে যায়।
তথাকথিত সুশীল সমাজের কুশীলবদের রক্ত কি হাড়হিম হয়ে গেল নাকি! উচ্ছিষ্ট ভোগী বুদ্ধিজীবীরা কোন থালায় কি চাটছেন এখন? 
কালীঘাটের ক্যানভাসে ছবি আঁকার জন্য কতটা চুন আর কালি আছে যা বিক্রি করে শ্মশানের ল্যাম্পোস্টে রবীন্দ্রসংগীত বাজানো হবে? 
দিদি প্রকাশ্যে পুলিশ কর্মীদের চাবকানোর হুমকি দিচ্ছেন। ভাইয়েরা পুলিশ খুন করে আনুগত্য দেখাচ্ছে। 
আর কত মায়ের কোল খালি হবে? কতটা রক্তে পিছল হবে মাটি? বাংলার মানুষ আর কতটা লজ্জিত হবে?
একমাত্র তিনিই জানেন এর উত্তর। আমরা উত্তরটা তার কাছ থেকে পেতে চাই।

গুলি চলার আগে পুলিশকে চড় মারার চেষ্টা৷ তারপর লোক ডেকে গণ্ডগোলে প্ররোচনা৷ তা সত্ত্বেও এখনও গ্রেফতার করা গেল না তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবালকে৷ চাপের মুখে অবশেষে মামলা শুরু করেছে পুলিশ৷  হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে সেই কংগ্রেস নেতা মোক্তারের বিরুদ্ধেও৷


এদিকে, হিংসার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে গার্ডেনরিচকাণ্ডে তৃণমূলের যোগ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে৷ এবিপি আনন্দর ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের লোকজন প্রথমে চিত্র সাংবাদিককে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে বলেন৷ কৌশলে অন্য জায়গায় পাঠানোর চেষ্টা করেন৷ বলেন, গণ্ডগোল এখানে হচ্ছে না৷ ওদিকে হচ্ছে৷ কিন্তু, সেই কৌশল কাজে না এলেও এতটুকু দমে যাননি ১৫ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান তথা ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না৷ 
এবিপি আনন্দর ফুটেজে স্পষ্ট, গুলি চালানোর কিছুক্ষণ আগে প্রথমে কর্তৃব্যরত এক পুলিশকর্মীকে চড় মারতে উদ্যত হন তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল৷ এখানেই শেষ নয়, এরপর লোক জড়ো করার চেষ্টা করেন মুন্না৷ গণ্ডগোল পাকানোর প্ররোচনা দেন৷ এই ইকবালের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শেখ সুভান৷ ভিডিও ফুটেজে সুভানকেই গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই সুভানের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ রয়েছে৷ তৃণমূল নেতা পুলিশকে মারতে উদ্যত হলেন৷ দলের কর্মীদের কাছে বার্তা গেল, পুলিশকে মারা যায়৷ এর কিছুক্ষণ পরেই কর্তৃব্যরত সাব ইন্সপেক্টরকে গুলি৷  
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, বহরমপুরে জেলাশাসকের অফিসে বাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যদি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করতে পারে, তা হলে কেন তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা হবে না৷
চাপে পড়ে, অবশেষে বুধবার, তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ একই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে কংগ্রেস নেতা মোক্তার ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও৷ এই সব মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও, তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল এখনও অধরা৷ অথচ, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত, সঙ্গীদের নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ এর আগে, ২০১১ সালের মার্চ মাসেও ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবলকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে ইকবালের বিরুদ্ধে৷ তখন তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ৷ কিন্তু, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ক্ষমতায় তৃণমূল৷ মহম্মদ ইকবাল এখন শাসক দলের নেতা৷
সে কারণেই কি এখন মহম্মদ ইকবালকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ? শাসক দলের নেতা বলেই কি পুলিশকে চড় মারার সাহস পান মহম্মদ ইকবাল? তৃণমূল কাউন্সিলর বলেই কি পুলিশের সামনেই গণ্ডগোল পাকানোয় প্ররোচনা দিতে পারেন ইকবাল? হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা যাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নিতে পারে সে জন্যই কি গণ্ডগোল এড়াতে পুলিশ কর্তাদের মধ্যে ঢিলেমি?
বিভিন্ন মহলে উঠছে প্রশ্ন৷ পাশাপাশি, গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশের নিচুতলারই একাংশ৷ আগে থেকে আঁচ পাওয়ার পরেও গণ্ডগোল এড়াতে কোনও কড়া বার্তা দেয়নি পুলিশের শীর্ষ কর্তারা৷ কলেজ চত্বরে বাড়ানো হয়নি পুলিশি নিরাপত্তা৷ এর জেরে দুষ্কৃতীর গুলিতে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়েছে একজন সাবইন্সপেক্টরকে৷ যে তৃণমূল নেতা পুলিশকে চড় মারতে উদ্যত হলেন, প্ররোচনা দিলেন, তাঁকেও এখনও গ্রেফতার করা গেল না৷ এরপরও নিচুতলার বাহিনির মনোবল বলে কি আর কিছু থাকবে? পুলিশের অন্দরেই উঠছে এই প্রশ্ন৷ 

গার্ডেনরিচকাণ্ডে তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবালকে ক্লিনচিট দিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ ঘটনার একদিন পর মহাকরণে তাঁর স্পষ্ট কথা, গতকালের ঘটনায় কোনওভাবেই জড়িত নন মহম্মদ ইকবাল৷ পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর দাবি, গার্ডেনরিচকাণ্ডে নতুন করে আর কাউকে গ্রেফতার করা হবে না৷ অন্যদিকে,ঘটনার নেপথ্যে ফিরহাদেরই হাত দেখছে সিপিএম৷
গতকাল ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে, পুরো ঘটনার দায় কংগ্রেস ও সিপিএমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন হাকিম। তাঁর দাবি ছিল, ইকবালকে বাঁচাতে গিয়েই পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি কংগ্রেস নেতা মোক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।পরে অবশ্য ভিডিও ফুটেজে হাকিমের দাবির সত্যতা যথার্থ ছিল না বলে জানা যায়। মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের ফারাকও ছিল।যদিও এতকিছু স্বত্বেও তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবালের পাশে দাঁড়ালেন ফিরহাদ হাকিম৷


ঘটনার আগে, ঘটনার পরে৷ গুলি চালানোর আগে আততায়ীর পাশে যে তৃণমূল নেতা শানু ও ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না, ঘটনার পর তাঁরাই ফিরহাদ হাকিমের পাশে৷ আর বুধবার তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবালের পাশে দাঁড়ালেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী৷ দলীয় নেতাকে ক্লিনচিট দিয়ে মহাকরণে দাঁড়িয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মহম্মদ ইকবাল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তিনি বিশ্বাস করেন না৷ 
শুধু তাই নয়, অভিযুক্তদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে মন্ত্রীর উত্তর, টিভিতে যাদের দেখা গেছে, তাদের প্রথম দেখলাম৷ বললেন, ভিডিওতে দেখা গেলেই কি তারা সব চেনা মুখ হতে পারে।
মন্ত্রী একথা বললেও, ঘটনার নেপথ্যে ফিরহাদ হাকিমেরই হাত দেখছে সিপিএম৷ গার্ডেনরিচকাণ্ডে সরাসরি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে কাঠগড়ায় তুললেন সিপিএম নেতা রবীন দেব৷ তাঁর দাবি, অশান্তির ঘটনা ঘটিয়েছেন ফিরহাদই৷
ঘটনার পর একদিন কেটে গেলেও সব জেনেও কেন চুপ মুখ্যমন্ত্রী, প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র৷
প্রশ্ন উঠেছে, গুলি করে এসআইকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার যে যুবক, সেই শেখ সুভান কীভাবে তৃণমূল নেতা ও বরো চেয়ারম্যানের পাশে? তাহলে কি তৃণমূলের ছত্রছায়াতেই আততায়ী? 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33534-2013-02-13-15-45-34


লকাতা: সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করলেন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে সমাজবিরোধী-দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের মধ্যে গুলিতে প্রাণ হারানো পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতি চৌধুরী৷কান্নায় ভেঙে পড়ে মিনতিদেবী বলেছেন, মাথার উপর লোকটাই তো চলে গেল! তিনি চান, মুখ্যমন্ত্রী একবার তাঁদের সামনে আসুন৷ কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তো পুলিশের কথাই শোনেন না৷কী অবস্থায় তাঁর স্বামীকে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারাতে হল, সেটা তিনি তাঁকে বলতে চান। তাঁর বক্তব্য, দুষ্কৃতীর হাতে অস্ত্র অথচ নিরস্ত্র পুলিশ! কতটা নিরাপত্তাহীনতায় পুলিশকর্মীরা থাকেন, মুখ্যমন্ত্রী এসে দেখুন৷ তাঁর স্বামী যেহেতু সরকারের কাজ করছিলেন, তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বও সরকারের নেওয়া উচিত ছিল বলে অভিমত মিনতিদেবীর।

একটা বুলেটেই সব শেষ ওদের৷ মঙ্গলবার সকালে ডিউটিতে গিয়েছিলেন তাপস৷ আর ফেরেননি, ফিরবেনও না৷ এই কঠোর বাস্তবটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই মিনতীদেবী ও তাঁর সন্তানদের৷ মৃত্যুর পর বাড়ি গিয়েছেন নেতা-মন্ত্রীরা৷ মিলেছে চাকরির প্রতিশ্রুতি৷ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস৷ এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁদের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানান পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা৷ তাঁদের হাতে ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন তিনি৷ নিহত পুলিশকর্মীর  মেয়েকে চাকরি ও ছেলে তমালের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দেন৷


কিন্তু স্রেফ এধরনের আর্থিক সাহায্যে কি ক্ষত মেটে? প্রশ্ন তুলেছেন ওঁরা।দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন মিনতীদেবী, মেয়ে তনুশ্রী চৌধুরী ও ছেলে তমাল চৌধুরী। পিতৃহীন তমাল বলেছে, যে আমার বাবাকে মেরেছে, আমি তার শাস্তি চাই, শাস্তি চাই, শাস্তি চাই।হতবাক তনুশ্রী৷ দু'চোখের স্বপ্ন যেন নিমেষে শেষ হয়ে গিয়েছে৷ তমাল-তনুশ্রীর দাবি, দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই যাতে আর কাউকে যেন এভাবে বাবাকে হারাতে না হয়৷ 
প্রসঙ্গত, রাজ্যের পুলিশ দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। ডিউটিরত অবস্থায়  তাঁর বিভাগের একজন কর্মীর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর পরিবারের জন্য কী ব্যবস্থা নেন, এখন সেটাই দেখার। তবে নানা মহলের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী তাঁরই নিরাপত্তায় নিযুক্ত পুলিশকর্মীকে আপনাদের চাবকানো উচিত বলে সম্প্রতি প্রকাশ্যে ধমক দেওয়ায় তাঁর দলের নীচুতলার লোকজন যা খুশি তাই করার সাহস পেয়ে গিয়েছে।এমনকী গতকাল পুলিশকর্মীর মৃত্যুতে যখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তখন তাঁকে তেখালির সভায় গানের তালে তাল দিতেও দেখা গিয়েছে।স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণ এই বার্তাই দিয়েছে যে, ঘটনাটি তেমন গুরুত্ব পাওয়ার মতোই নয়! 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33511-2013-02-13-05-21-26


ধর্ষিতা মা-রক্তে ভেজা মাটি-লজ্জিত মানুষ      পিস্তল হাতে জাপ্টে ধরা খুনিকেও টিএমসি নেতাদের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল  পুলিশ সহকর্মী! এ ঘটনায় প্রমান হয়ে গেল সমাজবিরোধীদের হাতে শাসন ক্ষমতা চলে গেলে আইনের রক্ষকেরাও কতটা নিরুপায় হয়ে যায়।  তথাকথিত সুশীল সমাজের কুশীলবদের রক্ত কি হাড়হিম হয়ে গেল নাকি! উচ্ছিষ্ট ভোগী বুদ্ধিজীবীরা কোন থালায় কি চাটছেন এখন?       কালীঘাটের ক্যানভাসে ছবি আঁকার জন্য কতটা চুন আর কালি  আছে যা বিক্রি করে শ্মশানের ল্যাম্পোস্টে রবীন্দ্রসংগীত বাজানো হবে?     দিদি প্রকাশ্যে পুলিশ কর্মীদের চাবকানোর হুমকি দিচ্ছেন। ভাইয়েরা পুলিশ খুন করে আনুগত্য দেখাচ্ছে।   আর কত মায়ের কোল খালি হবে? কতটা রক্তে পিছল হবে মাটি? বাংলার মানুষ আর কতটা লজ্জিত হবে?  একমাত্র তিনিই জানেন এর উত্তর। আমরা উত্তরটা তার কাছ থেকে পেতে চাই।

প্রথমেই পুরো ঘটনাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা। একইসঙ্গে, পুলিসি তদন্তও কোন পথে হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এমন ভূমিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সেই অভিযোগকে কার্যত সিলমোহর দিয়েছে কলকাতা পুলিসের ভূমিকা। গতকালের গার্ডেনরিচের ঘটনায় এফআইআরে নাম থাকলেও গ্রেফতার হয়নি বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। জানা গিয়েছে আজও এলাকায় বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুন্না। এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম এ দিনও জোনাল অফিসে বৈঠক করেন। সেই সময়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুন্না। 

ঘটনার শুরু থেকে শেষ, প্রবল বিক্রমে লক্ষ্য করা গিয়েছে ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান ওরফে মুন্নার উপস্থিতি। তাঁর সঙ্গীরাও যে সশস্ত্র ছিল, তারও প্রমাণও মিলেছে। পুলিস এই ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও এফআইআরে নাম নেই মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার। অভিযোগ উঠেছে, পুরমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই তাঁকে ছাড় দিয়েছে পুলিস। ঘটনার পরেই ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য ছিল মুন্নাই আক্রান্ত হয়েছে।
 
সেই সময়ও পুরমন্ত্রীর পাশে দেখা দিয়েছে সগর্ব উপস্থিতি। শেষপর্যন্ত পুরমন্ত্রীর পাশে এই সগর্ব উপস্থিতির কারণেই কী গ্রেফতার করা যায়নি মুন্নাকে? এমনকী তাঁর নেতৃত্বে হামলা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়নি। যদিও দিনকয়েক আগে এই ধরনেরই একটি ঘটনায় কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রনোদিত মামলা দায়ের করেছিল পুলিস। 


গার্ডেনরিচে দুষ্কতীর গুলিতে পুলিসের এস আই নিহত হওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। ধৃতেরা হল ইবনে সৌদ, গুলাম তালিম ওরফে আফতাব, আবদুল মোতিন ওরফে রাজু এবং  শেখ সুভান।  ঘটনার পরই পালানোর সময় ইবনেকে ধরে ফেলে পুলিস। সেই সময়  পর্যাপ্ত পুলিস কর্মী না থাকার সুযোগ নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় বোরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবালের তৃণমূল বাহিনী ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ইবনেকে। জানা গিয়েছে, ইবনে মহম্মদ ইকবালের ঘনিষ্ঠ। পরে ফের তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গার্ডেনরিচ। দুই ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক পুলিসকর্মীর। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঘটনার কিছু পরেই কংগ্রেসকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করান স্থানীয় বিধায়ক ও পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পন্ডা। তবে তাঁর দাবিকে কার্যত ভুল প্রমাণ করে ডিসি পোর্ট ভি সলোমন সাংবাদিকদের জানান, কলেজ নির্বাচন ঘিরে ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যেই ঝামেলার জেরে এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে।

তবে এখানেই শেষ নয়, সূত্রের খবর, শেখ সোভান নামের যে দুষ্কৃতি গুলি চালায় তাকে প্রথমেই চিহ্নিত করে ধরে ফেলে পুলিস। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল সহযোগীরা পুলিসের হাত থেকে শেখ সোভানকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

একই সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী মোক্তার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ শীলের ওপর হামলা চালিয়েছেন। অন্যদিকে সেই দাবিকেই নস্যাৎ করে দেয় স্বয়ং অভিজিৎ শীলের স্বীকারোক্তি। ডাক্তারের উপস্থিতিতে পুলিসের সামনেই অভিজিৎ স্বীকার করে নেয় বোমা বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে।

এরসঙ্গেই ফিরহাদ হাকিম আরও দাবি করেছেন কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআইএমও এই হামলার সঙ্গে জরিত ছিল। স্থানীয় তৃণমূল বরো কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল তথা মুন্নাকে লক্ষ্য করেই মোক্তারের লোকেরা গুলি চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁকে বাঁচাতে গিয়েই এসআই তাপস চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দাবি ফিরহাদ হাকিমের।

তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ঘটনায় মুন্না ভাই-এর ভূমিকা, অভিজিৎ শীলের স্বীকারোক্তি এবং ইমলেকে পুলিসের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার খবরে দুর্বল হয়ে পড়েছে ফিরহাদ হাকিম এবং শঙ্কুদেব পন্ডার তত্ত্ব।


কংগ্রেস কর্মীদের বিক্ষোভে লাঠি চালাল পুলিস। গার্ডেনরিচ কাণ্ডে কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করে কংগ্রেস। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষ। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিসের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের বচসা বাধে । বচসা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। এরপরেই লাঠিচার্জ করে পুলিস।
এদিকে রাজারহাটে চিনার পার্কে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির সামল দিতে ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিস বাহিনী।


ফের শ্লীলতাহানির ঘটনা  আতঙ্কের  বারাসতে। শ্লীলতাহানি করে এক মহিলাকে অটো থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল দুষ্কৃতীরা। থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিস। একজনকে আটক করা হলেও ঘটনায় তিনি জড়িত নন বলে জানান অভিযোগকারী মহিলা। পরে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয় পুলিস।   

বুধবার সকাল থেকেই থমথমে বারাসতের হেলা বটতলা। অটোস্ট্যান্ডে ইতস্তত যাত্রীদের ভিড়। মহিলা যাত্রীদের চোখে-মুখে  নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্কর ছাপ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অটোর মধ্যেই এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মহিলাকে অটো থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। 


 
ঘটনার পর থেকেই পলাতক দুই দুষ্কৃতী। খোঁজ নেই অটোচালকেরও। মঙ্গলবারই বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মহিলা। এক ব্যক্তিকে আটকও করে পুলিস। কিন্তু ঘটনায় ওই ব্যক্তি  জড়িত নন বলে জানান অভিযোগকারী মহিলা। পরে সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয় পুলিস।
 
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারাসতে একের পর এক ঘটনা ঘটলেও নিষ্ক্রিয় পুলিস। এর জেরে চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা।


ফের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হলেন এক কিশোরী এবং তাঁর বাবা। গতরাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুরলিয়ার তেলকল পাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বেশ কিছুদিন ধরে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে উত্যোক্ত করত বাবন বাউড়ি নামে স্থানীয় এক যুবক।  গতরাতে কটুক্তির প্রতিবাদ করায় কিশোরীকে আক্রমণ করে বাবন বাউড়ি। ছুরি দিয়ে রীতিমতো কোপান হয় ছাত্রীকে। বাধা দিলে আক্রান্ত হন কিশোরীর বাবাও। 

গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকেই দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় অন্য হাসপাতালে। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুরুলিয়া থানার পুলিস। তবে ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত বাবন বাউড়ির এখনও কোনও হদিশ মেলেনি বলেই পুলিস সূত্রে খবর।



about an hour ago 

****बामसेफ के सभी पक्षों के अध्यक्षों को मुंबई में बामसेफ के एकीकरण के सम्मलेन में शामिल होने के लिए निमंत्रण भेजा गया !****

क्या आप विघटित होकर संघर्ष करना चाहते हैं ? क्या बामसेफ के नाम पर समाज में आप अपनी दूकान चलाना चाहते हैं ? क्या आप अपनी और अपने समाज की सुरक्षा के लिए समाज के आन्दोलन का संस्थानीकरण करना चाहते हैं ? क्या आप समाज के आन्दोलन का नियंत्रण किसी एक आदमी के हाथ में देकर उसको ब्राह्मणों का दलाल बनाकर आन्दोलन को तहश-नहश करना चाहते हैं ? यदि नहीं तो चलो मुंबई बामसेफ के एकीकरण के सम्मलेन में !

हिंदी में अपील पत्रिका यहाँ से डाउनलोड करें http://min.us/lb0JooCknEyjlD
इंग्लिश में अपील पत्रिका यहाँ से डाउनलोड करें http://min.us/IMdn9UrekEnwo
****बामसेफ के सभी पक्षों के अध्यक्षों को मुंबई में बामसेफ के एकीकरण के सम्मलेन में शामिल होने के लिए निमंत्रण भेजा गया !****

क्या आप विघटित होकर संघर्ष करना चाहते हैं ? क्या बामसेफ के नाम पर समाज में आप अपनी दूकान चलाना चाहते हैं ? क्या आप...See More

सच्चर आयोग की तरह एक और 



आयोग का गठन करके क्यों नहीं बताते 

कि आखिर बंगाल में विकास किसका 

हुआ और किसका नहीं​!
​​
​पलाश विश्वास

आप जरा सुप्रीम​​ कोर्ट के न्यायाधीश की अध्यक्षता में सच्चर आयोग की तरह एक और आयोग गढ़ दें जो पता करें कि बंगाल में किसकिसका कितना विकास हुआ और किस किस का नहीं हुआ।ऐसे सर्वे से बंगाल में जंगल महल और पहाड़ की असली समस्या के बारे में खुलासा हो जायेगा और हम जैसे ​​लोग मिथ्या भ्रम नहीं फैला पायेंगे। आयोग यह जांच करे कि बंगाल में ओबीसी जातियां कौन कौन सी हैं और उनका कितना विकास हुआ। अनुसूचितों और अल्पसंख्यकों का कितना विकास हुआ और बंगाल में बड़ी संख्या में रह रहे गैर बंगालियों का कितना विकास हुआ। सांच को आंच नहीं। हम सच उजागर होने पर अपना तमाम लिखा वापस ले लेंगे।​

जगतविख्यात समाजशास्त्री आशीष नंदी ने जो कहा कि भारत में ओबीसी, अनुसूचित जातियों और अनुसूचित जनजातियों के सशक्तीकरण​​ से ही भ्रष्टाचार बढ़ा, उसे लेकर विवाद अभी थमा नहीं। राजनीतिक आरक्षण से सत्ता की मलाई चाट रहे लोग सबसे ज्यादा विरोध कर रहे हैं तो कारपोरेट भ्रष्टाचार और अबाध पूंजी प्रवाह, बायोमेट्रिक नागरिकता और गैरकानूनी डिजिटल आधार ककार्ड योजना के जरिये जल जंगल जमीन से इन लोगों की बोदखली के खिलाफ राजनीतिक संरक्षण के मसीहा खामोश हैं तो सिविल सोसाइटी का आंदोलन सिर्फ इसलिए है कि अश्वमेध की नरसंहार​ संस्कृति के लिए सर्वदलीय सहमति से संविधान, कानून और लोकतंत्र की हत्या के दरम्यान मुद्दों को भटकाने का काम हो। सिविल ​​सोसाइटी का आंदोलन आरक्षण विरोधी है तो कारपोरेट जयपुर साहित्य उत्सव को ही आरक्षण विरोधी मंच में तब्दील कर दिया आशीष​​ बाबू ने और इसे वाक् स्वतंत्रता बताकर सिविल सोसाइटी उनके मलाईदार विरोधियों की तरह ही मैदान में जम गये हैं। राजनीति को सत्ता समीकरण ही नजर आता है और अपने अपने समीकरण के मुताबिक लोग बोल रहे हैं। वाक् स्वतंत्रता तो समर्थ शासक वर्ग को ही है, बाकी लोगों की ​​स्वतंत्रता का नजारा या तो कश्मीर है या फिर मणिपुर और समूचा उत्तर पूर्व भारत , या फिर सलवा जुड़ुम की तरह रंग बिरंगे अभियानों के ​​तहत राष्ट्र के घोषित युद्ध में मारे जा रहे लोगों का युद्धस्थल दंडकारण्य या देश का कोई भी आदिवासी इलाका। वाक् स्वाधीनता का मतलब तो बारह साल से सशस्त्र बल विशेषाधिकार कानून के विरोध में आमरण अनशन पर बैठी इरोम शर्मिला या पुलिसियाजुल्म के खिलाफ एकदम अकेली लड़ रही सोनी सोरी से पूछा जाना चाहिए।​


​​
​बहरहाल, इस विवाद से परे आशीष बाबू ने हमारा बड़ा उपकार किया है , जैसा कि आनंदबाजार के विस्तृत रपट के मुताबिक उन्होंने​ ​ जयपुर के उस उत्सव  में अपने विवादित वक्तव्य के समर्थन में कह दिया कह दिया कि बंगाल में भ्रष्टाचार नाममात्र है क्योंकि बंगाल में पिछले सौ साल से ओबीसी, अनुसूचित जनजतियों और अनुसूचित जातियों को सत्ता में हिस्सेदारी मिली ही नहीं। आजकल मुझे बांग्ला में नियमित लिखना होता है। उनके इस मंतव्य पर जब हमने लिखा कि यह तो हम बार बार कहते हैं। इसपर हमें तो जातिवादी कह दिया जाता है , पर बंगाल​​ के ब्राह्मणतंत्र को जारी रखने के इतिहास, भूगोल, अर्थशास्त्र और राजनीति के बारे में क्या कहेंगे इसजातिवादी आधिपात्यवाद और वर्चस्व का विरोध करना ही क्या जातिवाद है?

सत्तावर्ग के किसी प्रतिष्ठित व्यक्ति ने अपनी अवधारणा के सबूत बतौर यह सच पहली बार कबूल किया वरना बंगाल में तो जाति उन्मूलन ​​का दावा करने से लोग अघाते ही नहीं है। गायपट्टी अभी मध्ययुग के सामंती व्यवस्था में जी रहा है और वहीं जात पाँत की राजनीति होती है, यही कहा जाता है। राजनीति में सत्ता में हिस्से दारी में जो मुखर हैं, उनके अलावा ओबीसी और अनुसूचित जातियों की बहुसंख्य जनता इस मुद्दे पर ​​खामोश हैं क्योंकि हजारों साल से अस्पृश्यता का दंश झेलने के बाद इस तरह के लांछन से उन्हें कोई फर्क नहीं पड़ता और न ही वे किसीतरह के भ्रष्टाचार में लिप्त हैं ज उन्हें अपनी ओर से मलाईदार लोगों की तरह सफाई देने की जरुरत है। वे तो मारे जाने के लिए चुने हुए लोग हैं और उत्तर आधुनिक तकनीकें उनका बखूब सफाया कर रहे हैं। इन समुदायों में देश की ज्यादातर किसान जातियां हैं , जिनकी नैसर्गिक आजीविका खेती का सत्यानाश कर दिया गया, ऊपर से जल जंगल जमीन , नागरिकता और मानवाधिकार से उन्हें वंचित, बेदखल कर दिया जा रहा है। उनके सामने तीन ही​ विकल्प हैं: या तो निहत्था इस महाभारत में मारे जायें, अश्वमेध यज्ञ में परम भक्ति भाव से अपनी बलि चढ़ा दें, या आत्महत्या कर लें​  या अंततः प्रतिरोध करें। ऐसा ही हो रहा है। बंगाल में हमारे लिखे की कड़ी प्रतिक्रिया है रही है। कहा जा रहा है कि बंगाल में ओबीसी और अनुसूचित बाकी देश से आर्थिक रुप से ज्यादा संपन्न हैं तो उन्हें जात पाँत की राजनीति करके सत्ता में हिस्सेदारी क्यों चाहिए। कहा जा रहा है कि​ ​ भारत भर में बंगाली शरणार्थी महज पांच लाख हैं और उनमें से भी साठ फीसद सवर्ण। माध्यमों और आंकड़ों पर उन्हीका वर्चस्व है और कुछ भी कह सकते हैं। पर दबे हुए लोग भी बगावत करते हैं। परिवर्तन के बाद पहाड़ और जंगलमहल में अमन चैन लौटने के बड़े बड़े दावा किये जाते ​​रहे हैं। कल दार्जिलिंग में यह गुब्बारा मुख्यमंत्री ममता बनर्जी के सामने ही फूट गया और लोग गोरखालैंड के नारे लगाने लगे। खतरा तो यह है कि जंगल महल में भी कभी भी ऐसा ही विस्फोट हो सकता है। राजनीतिक शतरंज बिछाकर अपने चहेते चेहरे नेतृत्व में लाकर समस्याओं का निदान नहीं होता।समस्याओं से नजर भले हट जाये, समस्याएं जस की तस बनी रहती हैं।गौरतलब है कि जिन समुदायों के आर्थिक सशक्तीकरण का दावा किया जाता है, समस्याग्रस्त इलाकों में उन्हीकी आबादी ज्यादा है। यह ​​सर्वविदित है कि देशभर में आदिवासियों के पांचवीं अनुसूची और छठीं अनुसूची के तहत दिये जाने वाले अधिकारों से कैसे वंचित किया जाता​ ​ है।

इस सिलसिले में हमारा विनम्र निवेदन है कि जैसे सच्चर कमिटी की रपट से बंगाल में सत्ताइस फीसदी मुसलमानों की दुर्गति का खुलासा​ ​ हुआ और जनांदोलन में चाहे जिनका हाथ हो या चाहे जिनका नेतृत्व हो, इस वोट बैंक के बगावती तेवर के बिना बंगाल में परिवर्तन ​​असंभव था। पहाड़ और जंगल महल में आक्रोश के बिना भी बंगाल में न परिवर्तन होता और न मां माटी मानुष की सरकार बनतीष हम मान लेते हैं कि बंगाल में जाति उन्मूलन हो गया। यह भी मान लेते हैं कि मध्ययुग में जी रहे गायपट्टी की तरह बंगाल में किसी सामाजिक बदलाव की जरुरत ही नहीं रह गयी।सत्ता में भागेदारी के बिना सबका समान विकास हो गया और बाकी देश के मुकाबले बंगाल दूध का धुला है।

आप जरा सुप्रीम​​ कोर्ट के न्यायाधीश की अध्यक्षता में सच्चर आयोग की तरह एक और आयोग गढ़ दें जो पता करें कि बंगाल में किसकिसका कितना विकास हुआ और किस किस का नहीं हुआ।ऐसे सर्वे से बंगाल में जंगल महल और पहाड़ की असली समस्या के बारे में खुलासा हो जायेगा और हम जैसे ​​लोग मिथ्या भ्रम नहीं फैला पायेंगे। आयोग यह जांच करे कि बंगाल में ओबीसी जातियां कौन कौन सी हैं और उनका कितना विकास हुआ। अनुसूचितों और अल्पसंख्यकों का कितना विकास हुआ और बंगाल में बड़ी संख्या में रह रहे गैर बंगालियों का कितना विकास हुआ। सांच को आंच नहीं। हम सच उजागर होने पर अपना तमाम लिखा वापस ले लेंगे।​
​​
​कांग्रेस राज्य में १९७७ से सत्ता से बाहर है और उसके सत्ता से बाहर होने के बाद पहाड़ और जंगल महल में समस्याएं भड़क उठीं। बंगाल के सबसे बुजुर्ग कांग्रेस नेता देश के राष्ट्रपति हैं।कांग्रेस केंद्र में सत्ता में है। पहाड़ और जंगल महल की समस्याएं निपटाने में मुख्य दायित्व भी कांग्रेस का ही बनता है। तो बंगाल से कांग्रेस केंद्रीय मंत्री अधीर चौधरी और श्रीमती दीपा दासमुंशी, बंगाल कांग्रेस के नेता प्रदीप भट्टाचार्य और मानस भुइयां इसके लिए प्रयास तो कर ही सकते हैं। इससे कांग्रेस के भी हित सधेंगे।

जयपुर साहित्य महोत्सव के दौरान विवादित बयान देने वाले समाजशास्त्री आशीष नंदी से पूछताछ हो सकती है। जयपुर पुलिस की एक टीम पूछताछ के लिए दिल्ली पहुंच चुकी है। इस बीच राजस्थान हाईकोर्ट ने मंगलवार को साहित्य महोत्सव के आयोजक संजय रॉय की तुरंत गिरफ्तारी पर रोक लगा दी है। कोर्ट ने रॉय को जयपुर से जाने की भी इजाजत दे दी है। लेकिन कोर्ट ने यह भी कहा है कि जब पुलिस बुलाए तब रॉय हाजिर हों।

जयपुर पुलिस ने सोमवार को आशीष नंदी और संजय रॉय को नोटिस भेजे थे। दोनों के खिलाफ जयपुर के अशोक नगर थाने में एससी/एसटी एक्ट के तहत केस दर्ज किया गया है। अगर नंदी दोषी पाए जाते हैं तो उन्हें 10 साल तक की सजा हो सकती है।

डीसीपी प्रहलाद कृष्नैया के नेतृत्व में जयपुर पुलिस की टीम नंदी और अन्य के बयान दर्ज करेगी। नंदी ने साहित्य महोत्सव में रिपब्लिक ऑफ आइडियाज सेशन के दौरान दलितों को लेकर विवादित बयान दिया था। कृष्नैया ने बताया कि हम यह समझने की कोशिश करेंगे कि नंदी ने किस संदर्भ में बयान दिया है। पुलिस ने सोमवार को नंदी के दिल्ली स्थित आवास पर नोटिस भेजा था जिसमें उन्हें जांच में सहयोग करने के लिए कहा गया था। जबकि नंदी ने मंगलवार को कहा था कि उन्हें कोई नोटिस नहीं मिला है। वह अपने बयान पर कायम हैं और इसके लिए जेल जाने को भी तैयार हैं।

इधर, पश्चिम बंगाल की मुख्यमंत्री ममता बनर्जी ने कहा है कि दार्जिलिंग पर्वतीय क्षेत्र राज्य का हिस्सा बना रहेगा। दूसरी ओर, गोरखा जनमुक्ति मोर्चा समर्थकों ने उत्तर बंगाल उत्सव के उद्घाटन के दौरान अलग राज्य की मांग के पक्ष में नारे लगाए, जिससे ममता बिफर पड़ीं।ममता ने कहा कि दार्जिलिंग बंगाल का एक हिस्सा है और हम एक साथ रहेंगे। अब और कोई अशांति नहीं होनी चाहिए क्योंकि यह फिर विकास को बाधित करेगी। इस कार्यक्रम में जीजेएम अध्यक्ष और गोरखालैंड क्षेत्रीय प्राधिकरण के मुख्य कार्यकारी बिमल गुरूंग भी मौजूद थे। उनकी मौजूदगी में उनके समर्थकों के इस हरकत से ममता नाराज दिखीं। उन्होंने प्रदर्शनकारियों को चेताया कि इस तरह के राजनीतिक नारे नहीं लगाएं। उन्होंने कहा कि वे अपने पार्टी मंचों पर ये नारे लगाएं।ममता ने सुंदर मॉल में एक रंगारंग कार्यक्रम में कहा, 'आए हम मिल जुल कर रहें। दार्जिलिंग बंगाल का एक हिस्सा है और हम एक साथ रहेंगे।' इस कार्यक्रम में जीजेएम अध्यक्ष एवं गोरखालैंड क्षेत्रीय प्राधिकरण (जीटीए) मुख्य कार्यकारी विमल गुरुंग भी उपस्थित थे। ममता ने लोगों को संबोधित करते हुए कहा, 'अब और कोई अशांति नहीं होनी चाहिए क्योंकि यह फिर विकास को बाधित करेगी।'लेकिन मुख्यमंत्री के संक्षिप्त संबोधन के अंतिम चरण में जीजेएम समर्थकों के एक हिस्से ने नारे लगाए और गोरखालैंड के निर्माण की मांग करने वाले पोस्टर प्रदर्शित किए। इन से ममता नाराज दिखीं। वह उठ खड़ी हुईं और प्रदर्शनकारियों को चेताया कि वे इस कार्यक्रम में इस तरह के राजनीतिक नारे नहीं लगाएं। उन्होंने कहा कि वे अपने पार्टी मंचों पर ए नारे लगाएं। ममता ने कहा, 'कृपया याद रखें कि यह कोई पार्टी कार्यक्रम नहीं है। यह सरकारी कार्यक्रम है। मैं ऐसे मुद्दों पर बहुत सख्त हूं।' मुख्यमंत्री ने कहा, 'कृपया गलत संदेश नहीं दें ताकि लोग समझे कि दार्जिलिंग फिर परेशानी में जाने वाला है।' ममता जब ये बातें कह रही थी, गुरूंग मंच पर उनके बगल में बैठे थे। इसके बाद मुख्यमंत्री मंच से उतर गईं और दर्शकों के साथ बैठने गई जबकि जीजेएम समर्थक अपने हरे, सफेद और पीले रंग के पार्टी झंडा लहराते रहे।

इस बीच तेलंगाना राज्य के लिए केंद्र सरकार और आंध्र प्रदेश के क्षेत्रीय नेताओं के बीच चल रही रस्साकशी के बीच गोरखा जनमुक्ति मोर्चा (जीजेएम) ने पश्चिम बंगाल से अलग गोरखालैंड राज्य की मांग को लेकर सोमवार को दिल्ली के जंतर मंतर पर प्रदर्शन किया। सैकड़ों जीजेएम कार्यकर्ता तख्तियां और बैनर लिए हुए सुबह से ही प्रदर्शन कर रहे हैं।प्रदर्शन में पश्चिम बंगाल विधानसभा के तीन जीजेएम सदस्यों के अलावा संगठन की महिला, छात्र व युवा इकाइयों के सदस्य भी शामिल हैं। गोरखालैंड राज्य की मांग को दशकों पुरानी मांग बताते हुए जीजेएम के महासचिव रोशन गिरि ने कहा कि केंद्र सरकार को तेलंगाना के साथ गोरखालैंड के मुद्दे पर भी विचार करना चाहिए। गिरि ने कहा, "गोरखालैंड की मांग पहली बार आजादी से 40 साल पहले 1907 में उठाई गई थी। लेकिन केंद्र सरकार हमारी मांग पर विचार करने को तैयार नहीं है। वह केवल तेलंगाना पर विचार कर रही है। हमारी मांग है कि गोरखालैंड पर भी विचार किया जाए।" उन्होंने कहा, "हम निष्क्रिय होकर नहीं बैठेंगे। हम पर्वतीय अंचलों और दार्जिलिंग के तराई इलाकों में बड़े पैमाने पर आंदोलन शुरू करेंगे।" ज्ञात हो कि उत्तरी पश्चिम बंगाल के पर्वतीय क्षेत्र को अलग राज्य के लिए किए गए आंदोलनों में पिछले दो दशकों के दौरान कई लोग जान गंवा चुके हैं और क्षेत्र में आय के प्रमुख साधन चाय व लड़की उद्योग तथा पर्यटन पर इसका बुरा असर पड़ा है। पिछले वर्ष त्रिपक्षीय समझौते के बाद गठित गोरखालैंड क्षेत्रीय प्रशासन (जीटीए) पर जीजेएम का कब्जा है। पिछले वर्ष जुलाई में हुए जीटीए के चुनाव में इस संगठन को एकतरफा जीत मिली थी। गिरि ने कहा कि जीटीए समझौते पर हस्ताक्षर के समय भी जीजेएम ने गोरखालैंड राज्य की मांग नहीं छोड़ी थी।  उल्लेखनीय है कि जीजेएम के नेताओं ने इससे पहले 11 जनवरी को केंद्रीय गृह मंत्री सुशील कुमार शिंदे से मुलाकात की थी और मांग पर जोर दिया था।

अखिल भारतीय गोरखालीग के सचिव प्रताप खाती ने मंगलवार को कहा कि हमें तेलंगाना से कोई मतलब नहीं है, गोरखाओं को गोरखालैंड चाहिए। हमें अलग राज्य का विकल्प मंजूर नहीं है। यह स्वाभिमान व संस्कृति से जुड़ा मुद्दा है। इसे छोड़ा नहीं जा सकता। उन्होंने आरोप लगाया कि गोरखालैंड के नाम पर चुनाव जीतने वाले ही इस मुद्दे को भूल बैठे। विधायक व सांसद ने गोरखालैंड के लिए कुछ नहीं किया। जीटीए को राज्य का समतुल्य मानकर लोगों को गुमराह किया जा रहा है। हालत यह है कि जीटीए के नाम पर अभी तक खाता तक नहीं खुला है। डीएम के खाते के सहारे हीं सारे कार्य हो रहे हैं। जीटीए ही गोरखालैंड के लिए वास्तविक बाधा है।

गोजमुमो पर आरोप लगाया कि जीटीए में अभी तक अलग राज्य के लिए प्रस्ताव तक पारित नहीं हुआ है। इससे गोजमुमो की वास्तविकता का पता चलता है। यहां की जनता को गुमराह किया जा रहा है। गोजमुमो के आंदोलन को दिखावा बताया। इसे लालबत्ती कायम रखने के लिए राजनीतिक नौटंकी करार दिया। उन्होंने गोजमुमो को जीटीए खारिज करने की चुनौती दे डाली। सभी प्रतिनिधि अपने पद से शीघ्र इस्तीफा देकर सड़क पर आएं। कहा कि सुविधा और आंदोलन साथ-साथ नहीं हो सकते। अलग राज्य आसानी से मिलने वाला नहीं है। यहां के बुद्धिजीवियों से आगे आने का आह्वान किया। कहा कि वे हीं आंदोलन को सही दिशा दे सकते हैं। आरोप लगाया कि यहां का वास्तविक इतिहास व भूगोल से देश को अवगत नहीं कराया गया है। मुख्य राजनीतिक दल का कर्तव्य का निर्वाह करने में गोजमुमो असफल रहा है। यहां के दस्तावेज को सही तरीके से प्रस्तुत करना होगा। यहां के राजीनीतिक दलों के दो चेहरे हैं।


107 वर्षो से गोरखालैंड की मांग की जा रही है। गोरखा जनमुक्ति मोर्चा तथ्यों व व्यवहारिक आधार पर गोरखालैंड की मांग कर रही है। यह समय व परिस्थिति की मांग है। कर्सियांग में उक्त बातें स्टडी फोरम के सदस्य पी अर्जुन ने कही। उन्होंने मोटर स्टैंड में महकमा समिति द्वारा आयोजित जनसभा को संबोधित करते हुए कहा कि विरोधी गोजमुमो पर आधारहीन व निराधार आरोप लगाते रहे हैं। गोजमुमो ने गोरखालैंड की मांग को बिना त्याग किए जीटीए स्वीकार किया था। यह एक क्षेत्रीय व्यवस्था है। इसके जरिए स्थानीय समस्याओं का समाधान किया जा सकता है। गोरखालैंड एक राष्ट्रीय विषय है। यह गोरखाओं के अस्तित्व व पहचान जुड़ा मसला है। पश्चिम बंगाल सरकार द्वारा गोरखालैंड के विरोध पर हम सतर्क हैं। जीटीए समझौता में रोशन गिरि ने हस्ताक्षर किया। जीटीए संविधान के तहत नहीं है। इसे किसी भी समय विमल गुरुंग के आदेश से खारिज किया जा सकता है। जीटीए सूबे के मुख्यमंत्री ममता बनर्जी की सक्रियता से मिला है। जनता के अनुरोध पर जीटीए प्रमुख का दायित्व विमल गुरुंग ने संभाला है। गोजमुमो का लक्ष्य गोरखालैंड है। राजनीति में समय के अनुकूल परिवर्तन होना चाहिए। अभागोली व क्रामाकपा का जिक्र करते हुए उन्होंने कहा कि 1943 में गठित अभागोली ने पर्वतीय क्षेत्र के लिए आज तक कुछ नहीं किया। यह सभी मोर्चे पर असफल रहा है। क्रामाकपा के अध्यक्ष आरबी राई के निर्णय उनके प्रतिष्ठा के अनुरूप नहीं होते। कहा कि गोरखालैंड का लक्ष्य हासिल करने का गुर विपक्ष हमें सिखाए। इसके लिए हम तैयार है। गोरखालैंड के लिए विपक्ष एकजुट होकर गोजमुमो का समर्थन करें। गोरखाओं के राष्ट्रीय पहचान के लिए सभी को एकजुट होना आवश्यक है। तेलंगाना से गोरखालैंड की तुलना नहीं की जा सकती। तराई व डुवार्स को गोजमुमो ने नहीं छोड़ा है। गोरखालैंड के गठन में गोरखा बहुल क्षेत्र को शामिल किया जाएगा। उन्होंने आरोप लगाया कि गोरामुमो सुप्रीमो सुभाष घीसिंग ने गोरखालैंड की मांग को छोड़ दिया था। यहां की समस्या निराकरण का एक ही उपाय गोरखालैंड का गठन है। बंगाल विभाजन विषय नहीं है। क्योंकि यह भूभाग बंगाल का है ही नहीं, तो बंगाल विजाभन का प्रश्न ही कहां उठता।

नारी मार्चा अध्यक्ष आशा गुरुंग ने कहा कि तेलंगना से पूर्व गोरखालैंड की मांग है। इसका गठन होना आवश्यक है। गोरखाओं के योगदान को भुलाया नहीं जा सकता है। जान की बाजी लगाकर देश की रक्षा करते रहे हैं। लेकिन सरकार से समुदाय के साथ अन्याय किया है। विमल गुरुंग ने जीटीए समझौते में हस्ताक्षर नहीं किया है वे हस्ताक्षर सिर्फ गोरखालैंड के लिए ही करेंगे। जनता के हित के लिए प्राण न्यौछावर को भी तैयार हैं। जनता को डराकर आंदोलन नहीं करेंगे। गरीब जनता के लिए ही गोरखालैंड है।

कर्सियांग के विधायक डॉ रोहित शर्मा ने कहा कि पोस्टरबाजी से अलग राज्य हासिल नहीं किया जा सकता। हमारा अंतिम व पहला लक्ष्य गोरखालैंड है। गोजमुमो कई बार केंद्र को ऐतिहासिक दस्तावेज सौंप चुका है।

जीटीए चेरमैन प्रदीप प्रधान ने कहा कि हमारी संवैधानिक मांगों को मानना ही होगा। यह अस्तित्व से जुड़ा हैं। इसकी अनदेखी नहीं की जा सकती। गोजमुमो ही राज्य का गठन कर सकता है। सभा को सांगठनिक सचिव रतन थापा, फूबी राई, पेमेंद्र गुरुंग, सावित्री क्षेत्री, प्रणाम रसाईली व नवराज गोपाल क्षेत्री ने भी संबोधित किया। कार्यक्रम की अध्यक्षता तिलक गुरुंग ने व संचालन युवा नेता व वार्ड आयुक्त सुभाष प्रधान ने किया।

সাক্ষাত্কার...
পথে নেমেছেন বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ


এটা সত্যিই এক বড় ঘটনা। মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে প্রথমে রাজধানী ঢাকায় এবং পরে সারা বাংলাদেশে তরুণ সমাজ কয়েক দিন ধরে দিনরাত্রি অবিরাম বিক্ষোভ করে চলেছেন। তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রণোদিত নন, দেশের প্রতি ভালবাসা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি আনুগত্য দ্বারা পরিচালিত। এটি এক অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। ১৯৭১ সালের পর, মনে হয়, এমনটা দেখা যায়নি। যাঁরা এর উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁরা এখনও নাগরিক সমাজের অংশ হয়ে ওঠেননি তাঁরা ছাত্র ও যুবক। কিন্তু তাঁদের সমর্থনে এসে দাঁড়িয়েছেন সকল শ্রেণির নরনারী, সাধারণ মানুষ সত্যিকারের নাগরিক সমাজ। তাঁদের দাবি যদিও বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, কিন্তু ভাবাবেগটা তাকে অতিক্রম করে গিয়েছে। না দেখলে এই জাগরণকে পুরো বোঝা যাবে না।


পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে। আগে নাগরিক সমাজ তার কাজকর্মের মধ্য দিয়ে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চেষ্টা করত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মানুষের নানা অধিকারের দাবি তুলে ধরতে সরব হত। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে নিজের পৃথক সত্তাকে বিসর্জন দিত না। পরে অনেক সময় দেখা গেছে যে, নাগরিক সমাজের সদস্যরা রাজনৈতিক দলাদলিতে জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ যদি আওয়ামী লিগের পাশে দাঁড়ান তো অন্য জন্য বি এন পি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি)-কে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন। এতে নাগরিক সমাজের স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়। এই প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গেও ইদানীং বেশ প্রকট। নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট সদস্যরা এখানেও কোনও-না-কোনও দলীয় পরিসরে প্রায়ই বন্দি হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন দলের নেতা বা সমর্থকেরাও যেন তাঁদের মতো করে চিন্তাবিদদের দলীয় পরিচয়ে দেগে দিচ্ছেন। এই ব্যাপারে দুই বাংলার অদ্ভুত মিল।


বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চিন্তাবিদদের অধিকাংশেরই লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বাধীন করা। নিজেদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তাঁদের কাছে তখন ছিল গৌণ। পরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ সেই লক্ষ্যপূরণের পরেও সেনা-শাসনের অবসানের দাবিতে নাগরিক সমাজ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের পরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছিল। অনেকেই বহু ক্ষেত্রে ছোটখাটো চাওয়াপাওয়ার বিষয়ে বেশ আগ্রহী। এতে চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্র কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে তো বটেই! চিন্তার পিছনে আগের সেই আবেগ, ভালবাসা বা প্যাশনের জায়গা নিতে শুরু করেছিল বিভিন্ন বৈষয়িক ভাবনা। এই স্বার্থচিন্তাও নাগরিক সমাজের ভূমিকাকে বদলেছে, মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। মনে রেখো, এই ব্যাপারে আজকের ভোগবাদী সমাজও কম দায়ী নয়।
জনজাগরণ। যুদ্ধাপরাধীদের উচিত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এ পি

এই মানুষের মধ্যে একটি প্রজন্মের অংশবিশেষ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সরকার ও সেনার পক্ষ নিয়েছিলেন। তাদের চর হিসেবেও কেউ কেউ কাজ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা এঁদের 'রাজাকার' বলেই ভাবেন। এঁদের আর আজকের পাকিস্তান বা ভারতের নাগরিকতা পাবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই বিহারিদের নতুন যে প্রজন্ম যাঁরা স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের মাটিতে জন্মেছেন, তাঁদের অনেকেই ক্রমশ নাগরিকতা পেতে শুরু করেছেন। আগের মতো শিবিরে থাকবার প্রবণতাও এঁদের মধ্যে কমছে। আসলে দেশভাগের ইতিহাস ও যন্ত্রণা থেকে এই উপমহাদেশের মানুষ তো আজও মুক্ত হতে পারেননি।


নিশ্চয়ই হয়েছে। তবে সেটা হওয়ার কথাই ছিল। দুই বাংলার সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশনার মধ্য দিয়েও এই ভিন্নতা এসেছে। এই ধরনের ভিন্নতা, স্বাতন্ত্র্য তৈরি করলেও দূরত্ব বাড়ায় না কিন্তু। নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে পরস্পরকে সম্মান করবার মধ্য দিয়েই তো সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া, ভাষাগত ব্যবধান এবং ভিন্নতা সত্ত্বেও দুই বাংলার মধ্যে লেনদেনের সম্ভাবনা অপরিসীম।


সামাজিক-সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্র তো রয়েছেই। এর সঙ্গে রয়েছে ভৌগোলিক নৈকট্য। দেশভাগের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার অর্থনীতিই এক সময়ে বিপন্ন হয়েছিল। কিন্তু আজ নতুন ভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। সে নদীর জল বা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদই হোক, বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীই হোক লেনদেনের সম্ভাবনা সব ক্ষেত্রেই রয়েছে। এই লেনদেন শুধু দুই বাংলা নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সক্ষম। সর্বোপরি রয়েছে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রসঙ্গ। পারস্পরিক যাতায়াত দুই দেশের মধ্যে, দুই বাংলার মধ্যে বোঝাপড়া অনেক গুণ বাড়াতে পারে। ধরা যাক, এখানের কোনও রাজনৈতিক নেতা বলে বসলেন যে, এ পার থেকে এক ছটাক চালও বাংলাদেশে যেতে দেব না। তা হলে অবিশ্বাস বাড়ে, সম্পর্ক দুর্বল হয়। সেটা দুই বাংলা এবং দুই দেশেরই ক্ষতি করে। সোজা পথে চালের জোগান বন্ধ হলে অন্য পথ খুলে যায়। হয়তো তৃতীয় কোনও দেশের মধ্য দিয়েও চাল যায়। এতে প্রয়োজন হয়তো মেটে, কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।


স্বপ্ন এখনও দেখি। দেখি যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দারিদ্র, অশিক্ষা ও অন্যান্য অভাব-অনটন অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আর এই বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এবং ভারতবর্ষের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া শান্তি সমৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অঞ্চল বলে পরিচিত হয়েছে। 'সার্ক' বলে একটা সংগঠন গড়ে উঠেছিল প্রায় ত্রিশ বছর আগে। অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল তাকে ঘিরে, অথচ সেই আঞ্চলিক সংগঠন এখনও এই অঞ্চলের মানুষের আশা পূরণ করতে পারেনি। ইউরোপের অধিবাসীদের মতো আমাদের অঞ্চলের এক দেশের মানুষ বিনা বাধায় অন্য দেশে যেতে পারবেন, আমাদের এই অঞ্চলের দেশগুলো হয়তো তার জন্য এখনও তৈরি নয়। তবে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, আদানপ্রদান বাড়লে তার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ধরনও তো শেষে বদলায়। আর, মনে রাখতে হবে, মানুষের ঐক্য আর বোঝাপড়াই কিন্তু স্বৈরাচার, সন্ত্রাস আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যথার্থ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
http://www.anandabazar.com/13edit3.html

পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন।ক্ষমতার লড়াই তাই  সুনামী হয়ে আছড়ে পড়েছে বাংলার বুকে এপ্রিল মাসের শেষে নির্বাচন করতে চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। দু'দফায় হোক পঞ্চায়েত নির্বাচন। এমনটাই চাইছে রাজ্য সরকার। গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর রাজ্য সরকারকে তাদের মত জানাবে কমিশন। তারপরই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 


নির্ধারিত সময়ের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তত্‍পর রাজ্য। গোড়া থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আনার বিষয়ে চাপ দিচ্ছিল রাজ্য সরকার। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত ভোট হোক শীতকালে। ফেব্রুয়ারিতেই পঞ্চায়েত ভোটের দাবি জানান তিনি। কিন্তু তখনও ভোটারতালিকা সংশোধনের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত না হলে নির্বাচনের পথে না এগোনোর কথাও বলেন বাম নেতারা। 

তত্‍কালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শেষ করার জন্য চিঠি দেন। পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনাই ছিল এই চিঠির উদ্দেশ্য। ওই সময় পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রীও। 

সম্প্রতি দার্জিলিংয়ে উত্তরবঙ্গ উত্‍সবে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন পঞ্চায়েত নির্বাচন ঠিক সময়েই হবেকবে হবে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন এই নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল গোড়া থেকেই। তবে এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে এপ্রিলের শেষে বা মে মাসে নির্বাচন হবে। 

এবার নতুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে কদফায় পঞ্চায়েত ভোট হবে তা নিয়ে। নির্বাচন কমিশন  রাজ্য সরকার একাধিক বার দাবি জানিয়েছে পঞ্চায়েত ভোট হোক এক দফায়। তবে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কারণে তিন দফায় ভোট করতে চেয়েছিল কমিশন। 

মনে করা হচ্ছে, কমিশন নিজেদের মতে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত দুদফায় পঞ্চায়েত ভোট চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। বিরোধী নেত্রী থাকার সময় একাধিক দফায় ভোটের পক্ষে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

তবে এবার শুরু থেকেই তার সরকার এক দফায় ভোটের জন্য সওয়াল করে এসেছে। এর আগে ২০০৮ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল তিন দফায়। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল পাঁচ দফায়। সেই সঙ্গে অন্য একটি সমস্যাও সামনে চলে আসে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। যেহেতু ভোটকেন্দ্র হবে স্কুলগুলিতেই সেকারণে ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েত ভোট হওয়া সম্ভব নয়।

রাজ্যের ৬৬০০টি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ নির্বাচন সব মিলিয়ে কয় দফায় করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন সেটাই দেখার।


থমথমে গার্ডেনরিচ। এলাকায় দোকানপাট, স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও, এখনও আতঙ্কে এলাকাবাসী। গতকাল স্থানীয় হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংঘর্ষের মাঝে দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল সাব ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরীর। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আজও এলাকায় মোতায়েন পুলিসবাহিনী। 

গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে মঙ্গলবার ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করল উচ্চশিক্ষা দফতর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। 


তবে হরিমোহন ঘোষ কলেজ আজ ফাঁকা ছিল। টিচার ইনচার্জ, অধ্যাপকরা কলেজে এলেও, ছাত্রছাত্রীদের দেখা মেলেনি। টিচার ইনচার্জের বক্তব্য, কলেজে টেস্ট পরীক্ষা চলছে। আজ কোনও পরীক্ষা না থাকায়, ছাত্রছাত্রীরা কেউ আসেননি। 

তবে মনোনয়নপত্র পেশ ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা আগেই করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল, অর্থাত বারো ফেব্রুয়ারি সেকেন্ড ইয়ারের অর্থনীতির টেস্ট পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এগারো তারিখ নোটিস দিয়ে পরীক্ষার দিন বদলে করা হয় চোদ্দ তারিখ। 

নোটিসে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এড়ানো যায় না এমন কারণেই পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন পরিবর্তন করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন টিচার ইনচার্জ।


দশ কোটি টাকা খরচ করে চলছে মাটি উত্‍সব। অথচ যাঁদের জন্য এই উত্‍সব তাঁরাই রয়েছেন অন্ধকারে। চরম  সঙ্কটে দিন কাটছে বাঁকুড়ার মুবারকপুর এলাকার কৃষকদের।  সরকারি উদাসীনতায় দু`বছর ধরে বন্ধ এলাকার একমাত্র সেচ প্রকল্প। স্তব্ধ প্রায় কয়েকশ বিঘা জমির চাষবাস। 

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, "মাটির কাছাকাছি মানুষদের জন্যই মাটি উত্‍সব।" কিন্তু সত্যিই কি তাই? গত বছরের হিসাবও বলছে রাজ্যে কৃষকের অবস্থা কার্যত বিপন্ন। মুখ্যমন্ত্রীর উল্টো কথাই বলছে বাঁকুড়ার মুবারকপুর গ্রাম। সরকারি উদাসীনতায় বন্ধ বাঁকুড়ার মুবারকপুর এলাকার কৃষকদের চাষবাস। দু`বছর ধরে বন্ধ এলাকার একমাত্র সেচ প্রকল্প। জলের অভাবে কয়েকশো জমিতে চাষ হচ্ছে না। 
 
প্রায় আড়াইশো বিঘে জমিতে সেচের জন্য গন্ধেশ্বরী নদীকে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এই সেচ প্রকল্প। এর ওপর নির্ভর করে বছরে প্রায় তিনবার ফসল ফলাতেন এলাকার চাষীরা। কিন্তু বছর দুয়েক আগে হঠাত্‍ই বিদ্যুত্‍ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় এই সেচ প্রকল্পের। তারপর থেকেই বন্ধ চাষবাস। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন  বহু কৃষক।  

মাটি উত্‍‍সবের রোশনাই থেকে এভাবেই অনেক দূরে অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন জেলার বহু কৃষক। উত্‍‍সব আনন্দ তো দুরঅস্ত, দুবেলা দুমুঠো পেটের ভাত জোগাড়ই এখন সবথেকে বড় লড়াই এই কৃষকদের।


উঠে বসার চেষ্টা করলেন, পারলেন না
দাদা, গাড়ি নিয়ে আর যাবেন না প্লিজ। বিপদ হতে পারে।
সাবধান করে দিয়েছিলেন স্থানীয় দোকানদার। তখনও বুঝতে পারিনি, কিছু ক্ষণের মধ্যে গুলি খেয়ে মরতে দেখব কাউকে। এটা জানতাম, ১৯৮৪ সালে ডিসি বন্দর বিনোদ মেটাকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল এই গার্ডেনরিচে। আর এ দিন সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীকে বেঘোরে মরতে দেখলাম নিজের চোখেই।
ডাকঘরের ঠিকানা জে ২০৬ ও ২০৮ এ, পাহাড়পুর রোড। হরিমোহন ঘোষ কলেজ। মঙ্গলবার ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তোলার দিন। গত বার জিতেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট। এ বার তারা বিবদমান।
লুটিয়ে পড়েছেন গুলিবিদ্ধ সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। মঙ্গলবার গার্ডেনরিচে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
সোমবার রাতেই কলেজের উল্টো দিকে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে জখম হয় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অরিজিৎ শীল-সহ আরও দুই যুবক। এ দিন যে কিছু একটা ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কায় সকাল থেকে কলেজের সামনে মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছিল দু'দলের বচসা। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে সকাল ১১টার পর থেকে পাহাড়পুর রোডে বাস ও অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হল। ছাড় ছিল শুধু সংবাদমাধ্যমের গাড়ির জন্য।
বাঁধাবটতলা মোড় পার করতেই চোখে পড়ল রাস্তার দু'ধারে কংগ্রেস ও সিপিএমের পতাকা। একটু তফাতে তৃণমূলের ঝান্ডা। কিছুটা এগোতে এক দোকানদার বলে উঠলেন, "দাদা, গাড়ি নিয়ে আর যাবেন না প্লিজ। বিপদ হতে পারে।" রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের কয়েকটা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল আমাদের গাড়িও। সেখান থেকেই দেখলাম প্রায় কয়েক হাজার লোকের জটলা। হাতে লম্বা লাঠির ডগায় দলীয় পতাকা বাঁধা। পুলিশের সামনেই তৃণমূল ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা একে অপরের উদ্দেশে চোখ রাঙাচ্ছে। তাদের শান্ত করতে আতঙ্কিত মুখে ছুটে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। কোনও পদস্থ কর্তাকে চোখে পড়ছে না গোটা তল্লাটে। 
শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি
কলেজের ভিতরে অবশ্য অশান্তি নেই। পরিচয়পত্র দেখে তবেই পড়ুয়াদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দরজার এ পারে তৃণমূল চিৎকার করে চলেছে, বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ দখল করতে চাইছে কংগ্রেস। তাদের দোসর সিপিএম। কংগ্রেস গলা তুলে বলছে, তাদের ছাত্রদের মনোনয়নপত্র তুলতে দেবে না বলে গণ্ডগোল বাধাচ্ছে তৃণমূল। এ বার দু'পক্ষকে রাস্তার দু'দিকে সরিয়ে দিতে মাইকে প্রচার শুরু করল পুলিশ। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মুদিয়ালি রোডের দিকে আর কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের বাঁধাবটতলার দিকে সরিয়ে দিয়ে মাঝখানে প্রাচীর করে দাঁড়াল তারা। আমরা, সাংবাদিকরা তখন কলেজ গেটের উল্টো দিকে একটি বন্ধ দোকানের চাতালে জায়গা নিয়েছি।
বেলা পৌনে ১২টা। হঠাৎ মুদিয়ালি রোডের দিক থেকে কানে এল কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ। কিন্তু তৃণমূল কর্মীরাই দেখলাম খেপে গিয়ে বলতে লাগলেন, কংগ্রেস তাঁদের আক্রমণ করছে!
স্থানীয় তৃণমূল নেতা মহম্মদ একবাল ছুটে গিয়ে এক পুলিশ অফিসারকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিলেন, "কংগ্রেসের মোক্তার গুলি চালাচ্ছে। আর আপনারা কিছু করবেন না?" একবালের সঙ্গ নিলেন আরও কয়েক জন। তাঁদের দেখে এ বার খেপে গেলেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরাও। প্রাচীর করে দাঁড়ানো পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে দু'পক্ষই তেড়ে গেল একে অপরের দিকে। দলীয় পতাকা খুলে নিয়ে সেই লাঠি দিয়ে শুরু হল মারামারি। গোটা এলাকাটা তখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
অন্ত্যেষ্টির পথে। —নিজস্ব চিত্র
আচমকা বাঁধাবটতলার শৈলশ্রী সিনেমা হলের দিক থেকে শুরু হল বৃষ্টির মতো বোমাবাজি। নিমেষে ধোঁয়ায় ঢেকে গেল রাস্তাঘাট। তারই মধ্যে কানে আসতে লাগল গুলির শব্দ। কোন দিক থেকে গুলি আসছে, বোমাই বা ছুড়ছে কোন পক্ষ, কিছুই বোঝার উপায় নেই। আতঙ্কে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছেন দোকানিরা। বহুতলের দরজা-জানালা একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
প্রাণভয়ে দৌড়তে শুরু করেছি আমরাও। তারই মধ্যে খুব কাছ থেকে গুলি চালানোর একটা শব্দ কানে এল! চোখ ফেরাতেই ধোঁয়ার মধ্যে দেখি, বুকে হাত চেপে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন সাদা উর্দি পরা কলকাতা পুলিশের এক কর্মী। এক বার উঠে বসার চেষ্টা করলেন। তার পর সেই যে লুটিয়ে পড়লেন, আর উঠলেন না। সাদা জামাটা রক্তে লাল হয়ে গেল।
তখনও জানি না, মানুষটির নাম তাপস চৌধুরী (৫৬)। স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর। বাঁধাবটতলার দিকে গণ্ডগোলকারীদের সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন। আচমকাই খুব কাছ থেকে গুলিটা লাগল তাঁর। আর ঠিক তখনই একটা বোমাও পড়ল খুব কাছে। দৌড়ে এলেন কয়েক জন কনস্টেবল ও স্থানীয় মহিলা। ওর মধ্যেই পুলিশের ভ্যানে চাপিয়ে তাপসবাবুকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। 
লাল জামা পরা এই সেইশেখ সুহান। —নিজস্ব চিত্র
পথের লড়াই অবশ্য থামেনি। এক সাংবাদিকের পায়ের কাছেই এসে পড়ল একটি বোমা। কোন গলিতে ঢুকলে প্রাণে বাঁচা যাবে? উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। কারণ, প্রায় প্রতিটি গলিতেই তখন আশ্রয়কারীরা প্রস্তুত হচ্ছে পাল্টা হামলার জন্য! ততক্ষণে অবশ্য ঘটনাস্থলে এসে গিয়েছে আরও পুলিশ এবং র্যাফ। এসেছেন বড় কর্তারা। 
ক্রমে কমে আসতে লাগল বোমা-গুলির শব্দ। পরিষ্কার হতে লাগল ধোঁয়ার চাদর। ঘটনাস্থলে এলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, "মোক্তার কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই গণ্ডগোল করেছে!"
রাস্তার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তখন টহল দিচ্ছে র‌্যাফ। আর ধুলোর মধ্যে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে মাটিতে লেগে থাকা রক্তের দাগ।

http://www.anandabazar.com/13cal1.html

আত্মীয়ের ফোন আসতেই মিনতির জগৎ অন্ধকার
স্বামীর মৃত্যুর খবর তাঁর কাছে পৌঁছে দেননি পুলিশকর্তারা। টিভি দেখেই এক আত্মীয় ফোন করে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন তাঁকে। তাঁর কাছে খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে টিভি চালাতেই চোখের সামনে পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে গেল মিনতি চৌধুরীর।
হরিদেবপুরের সারদাপল্লির একতলা বাড়িটি চার বছর আগে তৈরি করেছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মী তাপস চৌধুরী। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে তিনিই। স্ত্রী মিনতিদেবী, ১৯ বছরের মেয়ে তনুশ্রী এবং ১৫ বছরের ছেলে তমালকে নিয়ে ঠাকুরপুকুরের মাঝিপাড়ার ভাড়াবাড়ি ছেড়ে উঠে এসেছিলেন তাপসবাবু। তনুশ্রী বিবেকানন্দ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তমাল বেহালার ম্যান্টনের আর্য বিদ্যামন্দিরের নবম শ্রেণির ছাত্র। মঙ্গলবার ঘটনার সময় তমাল স্কুলেই ছিল। আত্মীয়েরা তার জন্য অপেক্ষা না-করেই মিনতিদেবী আর তনুশ্রীকে নিয়ে রওনা হয়ে যান একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মৃত্যুর পরে সেখানেই রাখা হয়েছে তাপসবাবুকে।

নাম: তাপস চৌধুরী
 ৫৬
 স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে
 ১৯৮২ সালে
 সশস্ত্র পুলিশ 
 ১৯৯৪
 থানায় 
২০০৪
 স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ
স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের ওয়াচ শাখার এসআই

তার একটু পরেই হাসপাতালে পৌঁছে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতালে পুলিশ অফিসারেরা মিনতিদেবীকে জানান, তাঁদের বাড়িতে খবর দিতে পাঠানো হয়েছে এক পুলিশকর্মীকে। পুলিশই হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যায় মিনতিদেবীদের। চিকিৎসকেরা তাঁদের জানান, একটি গুলি তাপসবাবুর হৃৎপিণ্ডের তলায় বিঁধে গিয়েছে। এক্স-রে করে গুলিটির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে তাপসবাবুর।

তাপসবাবুর ভাইপো সোমনাথ চৌধুরী জানান, টিভিতে খবর দেখেই তাঁরা জানতে পারেন, গার্ডেনরিচের ঘটনায় কাকা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফোন করে কাকিমা মিনতিদেবীকে সব জানান তিনি। হাসপাতালে পৌঁছে স্বামীর মৃতদেহ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিনতিদেবী। জ্ঞান হারান বেশ কয়েক বার। চিকিৎসকেরা তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। মেয়ে তনুশ্রীকে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ আলাদা ঘরে আত্মীয়দের সঙ্গে বসিয়ে রাখেন।
একে একে হাসপাতালে আসতে শুরু করেন তাপসবাবুর আত্মীয়েরা। আসেন পড়শিরাও। এক প্রতিবেশী বলেন, "বহু দিন ধরেই তাপসবাবুকে চিনি। আগে পাশের পাড়ায় থাকতেন। ভাল মানুষ ছিলেন। তাই খবর শুনে না-এসে পারলাম না।" তাপসবাবুর বৃদ্ধা মা অসুস্থ, শয্যাশায়ী। হরিদেবপুরেই তাপসবাবুর এক ভাইয়ের কাছে থাকেন তিনি। তাপসবাবু প্রতিদিনই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ওই বাড়িতে যেতেন।
এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ খাকি-সাদা স্কুলের পোশাক পরা তমালকে নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন কয়েক জন আত্মীয়। বাবার মৃত্যুর খবর তখনও জানানো হয়নি তাকে। একসঙ্গে অনেক ক্যামেরার ঝলকানি দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে নিজেকে সামলাতে পারেনি সে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। আত্মীয় ও পড়শিদের অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
নিহত পুলিশকর্মীর মেয়ে তনুশ্রী ও স্ত্রী মিনতি চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র
এর মধ্যেই তনুশ্রী প্রশ্ন তোলেন, "কলেজ নির্বাচনে আসা একটি ছেলের হাতে অস্ত্র এল কী করে? খুনিকে না-ধরলে বাবার দেহ নেব না।" পরে মন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনার খুনিকে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন বলে জানান তাপসবাবুর আত্মীয়রা। এর মধ্যে শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু ঘোষণা করেন, তাপসবাবুর পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। রাতে তনুশ্রী বলেন "একটা মানুষ চলে গেলেন! টাকা বা চাকরি দিয়ে সেই ক্ষতি কি পূরণ করা যায়?" 
সহকর্মীরা জানান, ১৯৮২ সালে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল-পদে যোগ দেন তাপসবাবু। প্রথম পোস্টিং ছিল লালবাজারে। ধাপে ধাপে তিনি সাব-ইনস্পেক্টরের পদে পৌঁছন। বিভিন্ন থানা হয়ে তিনি স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সদর দফতরে যোগ দেন। এক সহকর্মী জানান, সোমবার রাতেই তাপসবাবুকে বলা হয়, গার্ডেনরিচে ডিউটিতে যেতে হবে।
মিনতিদেবী জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর ভাল নেই বলে জানিয়েছিলেন তাপসবাবু। কিন্তু পরে বলেন, কলেজের ভোটে গোলমাল হতে পারে। তাই এ দিন ছুটি নেওয়া ঠিক হবে না। পরে সুযোগমতো ছুটি নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার ডিউটি করলেন। সেই সঙ্গে তাঁর ছুটি হয়ে গেল চিরতরে।
http://www.anandabazar.com/13cal3.html


ধৃত ১৩
পথে পুলিশ খুন, কাঠগড়ায় তৃণমূল
গার্ডেনরিচে কলেজ নির্বাচন ঘিরে অশান্তির জেরে দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত্যু হল কলকাতা পুলিসের এক সাব-ইনস্পেক্টরের। সাম্প্রতিক অনেক ঘটনার মতো এই ঘটনাতেও মুখ পুড়ল শাসক দলের। 
গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে অশান্তির সূত্রপাত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে বচসাকে ঘিরে। লড়াইটা ছিল মূলত ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে। ছাত্র রাজনীতির গণ্ডি টপকে পরে সেটাই হয়ে দাঁড়াল এলাকা দখলের সংঘর্ষ। কলেজ ছেড়ে রাস্তায় শুরু হল বোমা-গুলির যুদ্ধ। যার মধ্যে পড়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রাণ দিয়েছেন পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরী (৫৬)। ঘটনার পরেই এলাকায় পৌঁছে পুরমন্ত্রী এবং স্থানীয় বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস এবং সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মিলে অশান্তি করছে। সিপিএম থেকে কংগ্রেসের আশ্রয়ে আসা মোক্তার নামে এক দুষ্কৃতীই গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
কিন্তু বেলা বাড়তেই শাসক শিবিরে অস্বস্তি বাড়ল। বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যে দেখা যায়, গুলি চালাচ্ছে শেখ সুহান নামে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ এক জন। যার কাকা ইবনে বাতিকল এলাকায় দলের শাখা সম্পাদক পদে রয়েছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। ছবিতেই ধরা পড়ে, ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে সুহান দাঁড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা, ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার পাশে। ফিরহাদ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও তাঁর পাশেই ছিলেন মুন্না। ওই ছবি দেখে এ দিন সন্ধ্যায় খুনের অভিযোগে সুহান-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোলমাল বাধানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে আরও ৯ জন।
বাবার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছে ছেলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গার্ডেনরিচে গোলমালের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছিল সোমবার রাত থেকেই। সে দিন বোমা বানাতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর (১৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ গুরুতর আহত হন। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের কোণঠাসা করার জন্যই হামলার ছক কষছিল তৃণমূল। এ দিন কংগ্রেস-সিপিএমের দিকে অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দিয়ে ফিরহাদ বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করেন বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। কিন্তু ঘটনা স্পষ্ট হওয়ার পরে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বলতে হয়েছে, অভিযুক্ত সকলকেই গ্রেফতার করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, "টিভির ফুটেজ সব সময় সত্যি বলে না।"
দুষ্কৃতীদের হাতে পুলিশের মৃত্যু এবং অভিযুক্তরা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ দু'দিক থেকেই এই ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর কাছে অস্বস্তির। এ দিন রাত পর্যন্ত গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। তবে নন্দীগ্রামে সরকারি অনুষ্ঠানে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, "গণতন্ত্র মানে শান্তি। গণতন্ত্র মানে উন্নয়ন। গণতন্ত্র মানে পুলিশকে গুলি করে মেরে ফেলা নয়। গণতন্ত্র মানে জেলাশাসকের দফতরে গুন্ডামি নয়!" প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত ছিল গার্ডেনরিচে এ দিনের এবং বহরমপুরে জেলাশাসকের দফতরে ক'দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সমর্থকদের তাণ্ডবের ঘটনার দিকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে গার্ডেনরিচের ঘটনার রিপোর্টও চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 
সুহান-সহ চার জনকে গ্রেফতারের খবর এ দিন সন্ধ্যায় মহাকরণে জানান স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাপসবাবুর সহকর্মীদের অভিযোগ, ঘটনার পরেই তাঁরা লাল-কালো ডোরাকাটা জামা পরা, সুহানকে বন্দুক-সহ জাপটে ধরেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মদতে জনতা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 
পুলিশ-হত্যার ঘটনায় দলের নাম জড়িয়ে পড়ায় ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে আন্দাজ করেই তাপসবাবুর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টার কসুর করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। মর্গে গিয়েছিলেন পার্থবাবু, ফিরহাদ, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সুব্রত বক্সী প্রমুখ। শ্মশান পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের নেতারা। তাপসবাবুর মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পার্থবাবু।
আমি বরাবরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রাজনীতিকরণ এবং ক্যাম্পাসে হিংসার বিরুদ্ধে।
রাজ্য সরকারের এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
রাজ্যপাল
যে ভাবে এ দিন তাপসবাবুর মৃত্যু হয়েছে, তাতে পুলিশের নিচু তলা ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, হরিমোহন কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গোলমাল হতে পারে বলে আগাম খবর দিয়েছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। তা সত্ত্বেও এ দিন সকালে এলাকায় ছিল না কোনও র্যাফ। যে সব পুলিশ কর্মী ছিলেন, তাঁদের হাতে ছিল স্রেফ লাঠি। এক বারের জন্যও দেখা যায়নি পুলিশের কোনও বড় কর্তাকে। এ সবের জেরে একবালপুরের যে হাসপাতালে তাপসবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা। 
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পুলিশ না-থাকায় সকাল থেকেই কলেজের সামনের এলাকার দখল নেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। একটা সময় বৃষ্টির মতো বোমা পড়তে থাকে। লালবাজারে বারবার জানানো সত্ত্বেও পুলিশকর্তারা আসেননি। অভিযোগ, শাসক দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। 
পুলিশের নিচু তলায় ক্ষোভের খবর পৌঁছেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। পার্থবাবু, ফিরহাদ এবং শোভনবাবুকে তিনিই পাঠান হাসপাতালে। কিন্তু তাপসবাবুর পরিবার জানিয়ে দেয়, খুনি যুবককে ফের ধরা না-হলে তারা মৃতদেহ নেবে না। সরব হয় বিরোধী দলগুলিও। চাপের মুখে এ দিন আর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি পুলিশ কমিশনার। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন করেও জবাব পাওয়া যায়নি গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের কাছেও। 
পুলিশ সূত্রের খবর, বন্দর এলাকায় তৃণমূল এবং কংগ্রেস দু'পক্ষই যথেষ্ট শক্তিশালী। এলাকা কাদের কব্জায় থাকবে, তা নিয়ে দু'দলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত বার নির্বাচনে হরিমোহন ঘোষ কলেজে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট এসএফআই-কে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে। এ বার জোট ভেঙে গিয়েছে। নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে দু'দলের নেতারাই এই নির্বাচনকে বেছে নিয়েছিলেন। 
স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ ও ১৫ নম্বর বরোর তৃণমূলের চেয়ারম্যান ইকবাল ওরফে মুন্নার দলবল ময়দানে নেমে পড়ে। তাঁদের দলবলই এ দিন এলাকায় তাণ্ডব চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। 
ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেসের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "রাজ্য সরকার নিরপেক্ষ ভাবে পুলিশকে দিয়ে কাজ করাতে পারছে না। ঘটনা ঘটার আগে যে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, পুলিশ তা করতে পারছে না।" প্রয়োজনে এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবির পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। আজ, রাজ্য জুড়ে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে ছাত্র পরিষদ। ফিরহাদ অভিযোগ করলেও ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, "আমাদের নাম জড়ানো ভিত্তিহীন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকুন মুখ্যমন্ত্রী।" 
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু অবশ্য কংগ্রেস এবং সিপিএমের দিকে রাজনৈতিক আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। এ দিন সন্ধ্যায় তাপসবাবুর শেষকৃত্যে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, "কংগ্রেস, সিপিএম ভেবে দেখুক সমাজবিরোধীদের হাতে দলীয় পতাকা গুঁজে দিয়ে এবং তাদের উস্কানি দিয়ে রাজ্যে শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা কতটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারসম্মত?"
http://www.anandabazar.com/13cal2.html


ইবনের সূত্রেই উত্থান সুহানের
বিস্ফোরণে জখম পাশের ওয়ার্ডের ওরা, তাই আসরে

দৃশ্য এক: মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা। কয়েকশো লোকের চোখের সামনে লাল ডোরাকাটা শার্ট পরা এক যুবকের ওয়ান শটার থেকে ছুটে আসা গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পুলিশ ধরেও ফেলল সেই যুবককে। 
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফের বিস্ময়। পুলিশকর্মীরা দেখলেন, তাঁদের কর্তাদের সামনেই এক ব্যক্তি সদলবল এসে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন তাকে! নিহত অফিসারের সহকর্মীরা তখনই বুঝে গেলেন, গোলমালের কুশীলব কারা। পুলিশের নিচুতলায় তত ক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে খবর লাল ডোরাকাটা শার্টকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর, পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। 
পুলিশের অবাক হওয়ার আরও অনেক কিছুই তখনও বাকি ছিল। তাপসবাবুর সহকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, যেখানে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি, মিনিট পনেরোর মধ্যেই সেখান থেকে মিটার তিরিশেক দূরে দাঁড়িয়ে বরো চেয়ারম্যানের সঙ্গে হেসে গল্প করছিল লাল ডোরাকাটা শার্ট! সঙ্গে ছিল আরও দু'জন। পুলিশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, গার্ডেনরিচ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ওই লাল ডোরাকাটা শার্ট পরা যুবকের নাম শেখ সুহান। সঙ্গে ছিল তার কাকা ও এ দিনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ইবনে এবং আরও এক অভিযুক্ত ফিরোজ। 
তত ক্ষণে চ্যানেলে-চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ঘটনার ছবি। তাতে দেখা যায়, কয়েকশো লোকের চোখের সামনেই গুলি চালিয়েছে লাল শার্ট পরা যুবক, সুহান। তখনও কিন্তু সুহান-ইবনেদের ফের ধরার প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ঘণ্টা তিনেক পর লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ যায়, যে করে হোক, সুহান, ইবনে ও ফিরোজকে ধরতে হবে। কিন্তু তত ক্ষণে তারা পগার পার! শেষ পর্যন্ত সুহান, ইবনে এবং তাদের দুই সঙ্গী আবদুল মতিন ওরফে রাজু ও গোলাম তালিব ওরফে আফতাবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে ফিরোজকে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। 
পুলিশ জানিয়েছে, কাকা ইবনের হাত ধরেই উত্থান সুহানের। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাতিকল এলাকার বাসিন্দা, ৩৭ বছরের ইবনের নাম গার্ডেনরিচ থানার 'রাফ রেজিস্টার' অর্থাৎ দুষ্কৃতী তালিকায় কয়েক বছর ধরে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইবনে বাতিকল এলাকায় তৃণমূলের শাখা সম্পাদক। তবে যে-কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে ঘিরে এই কাণ্ড, সেই হরিমোহন ঘোষ কলেজ কিন্তু তার এলাকা নয়। কলেজটি ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। কী এমন হল যে, পাশের ওয়ার্ডের গোলমালে জড়িয়ে পড়লেন বরো চেয়ারম্যান ও ইবনে-সুহানরা? পুলিশের বক্তব্য, সোমবার রাতে পাহাড়পুর রোডের নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ এবং ওই ঘটনায় ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ ও তার সঙ্গীদের জখম হওয়ার ঘটনাই সব হিসেব পাল্টে দিয়েছিল। 
পুলিশ জেনেছে, এ বার হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছিলেন রঞ্জিৎবাবু। গত বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদের দখল নিয়েছিল তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট। তার আগের বছর, ২০১১ সালে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে ওই কলেজে গণ্ডগোল হয় এবং সেই সময়ে ইবনেদের প্রতিপক্ষ দুষ্কৃতী-দলের পাণ্ডা, মোক্তার গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের বক্তব্য, মোক্তার তখন ছিল সিপিএমের আশ্রয়ে। সে বার এসএফআই ছাত্র সংসদের দখল নেয়। পুলিশের বক্তব্য, মোক্তার এখন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। তার পরেই ছাত্র পরিষদ এলাকায় টিএমসিপি-র সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। 
লালবাজার সূত্রের খবর, মূলত নিজের ওয়ার্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না এবং ইবনে-র মত ছিল, মনোনয়ন জমা করার সময়ে গণ্ডগোল না করাই ভাল। পুলিশের বক্তব্য, সোমবার রাতে অভিজিতরা জখম হওয়ায় বিপাকে পড়ে যান রঞ্জিতবাবু। আর তখনই ত্রাতা হিসেবে উদয় হয় মুন্না। সকাল থেকে খোলা পিস্তল হাতে দাপাদাপি শুরু হয় ইবনে, সুহানদের। এ সব দেখেও তখন দেখেনি পুলিশ। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের কথায়, "সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ না-পেলে আমাদের কী করার আছে?" 
পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখে আসরে নেমেছিল মোক্তারও। তদন্তকারীরা জেনেছেন, মূল গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয় ইবনের শাগরেদ ফিরোজ দু'টি বোমা ছোড়ার পর। ইবনরা রটিয়ে দেয়, ওই বোমা ছুড়েছে মোক্তার। পুলিশ সে দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ইবনে, সুহানরা পুরোদস্তুর অ্যাকশনে নামে। পাল্টা গুলি, ছোটাছুটি আতঙ্কের মধ্যেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তাপস চৌধুরী। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অভিযোগ, সুহানের গুলিতেই মারা গিয়েছেন তাপসবাবু।

http://www.anandabazar.com/13cal4.html


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: স্নায়ুযুদ্ধ
সময়কাল২৬ মার্চ১৯৭১-১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১
অবস্থানবাংলাদেশ
ফলাফলবাংলাদেশ ও ভারতের জয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
বিবদমান পক্ষ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ

ভারত ভারত (৩ ডিসেম্বর,১৯৭১ যুদ্ধে যোগদান)[১]

পাকিস্তান পাকিস্তান
নেতৃত্ব প্রদানকারী
বাংলাদেশ জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
ভারত জেনারেল জগজিত সিং অরোরা
ভারত ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ'
পাকিস্তান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী
পাকিস্তান জেনারেল টিক্কা খান
সৈন্য সংখ্যা
ভারত: ২৫০,০০০ [২]
মুক্তিবাহিনী: ১০০,০০০[২][৩]
পাকিস্তানী বাহিনী: ১০০,০০০

প্যারামিলিটারি: ২৫,০০০[৪]

প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
ভারত: ১,৪২৬ কঅনি
৩,৬১১ জন আহত (আনুষ্ঠানিক)
১,৫২৫ কঅনি
৪,০৬১ জন আহত[৫]


মুক্তিবাহিনী: ??? মৃত্যুবরণ করেন।

পাকিস্তান ৮,০০০ কঅনি
১০,০০০ জন আহত
৯১,০০০ যুদ্ধ বন্দী
(৫৬,৬৯৪ সামরিক বাহিনী
১২,১৯২ প্যারামিলিটারি
বাকিরা সাধারণ নাগরিক)[৫]

[৬]

সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি: ২৭,৯০,০০০[৭] থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত ধারণা করা হয়।[৮]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানেরবিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে।[৯] পঁচিশে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে। গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙ্গালীর তৎকালীন প্রিয় নেতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। পরিকল্গপিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ; জীবন বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষ পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর পতন আনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অত:পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]পটভূমি

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিমঅধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ভারত। নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হয় - পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি অংশের মধ্যে মিল ছিল কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস।

[সম্পাদনা]পূর্ব পাকিস্তানের দুর্দশার ইতিহাস

[সম্পাদনা]অর্থনৈতিক বৈষম্য

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল। মোট জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ থাকত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য।[১০]পাকিস্তানের মূল শাসক গোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। পশ্চিমা শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পাকিস্তান সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়ে এবং মানুষের মনে ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে।


[সম্পাদনা]ভাষা আন্দোলন

মূল নিবন্ধ: বাংলা ভাষা আন্দোলন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি অনুসন্ধান করে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। কেবল অর্থনৈতিক শোষণ নয়, বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপরও নিপীড়ন শুরু হয় এবং এর প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় যখন পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা দেন "উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"। সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা এই ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্যে এই আন্দোলন তীব্রতম রূপ ধারণ করে। এদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে হয়। আজ পৃথিবীব্যাপী ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

[সম্পাদনা]সামরিক অসমতা

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে বাঙ্গালীরা অবহেলিত ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন অংশে সমগ্র বাহিনীর মাত্র ৫ শতাংশ ছিল বাঙ্গালী অফিসার এবং এদের মধ্যে অধিকাংশই প্রযুক্তিগত বা ব্যবস্থাপনার পদে ছিলেন। খুব অল্প সংখ্যক বাঙ্গালী অফিসার আদেশদানকারী পদ লাভের সুযোগ পেতেন। পশ্চিম পাকিস্তানীরা বিশ্বাস করত বাঙ্গালীরা পশতুন বা পাঞ্জাবীদের মত "সাহসী" নয়। পাকিস্তানের বাজেটের একটি বিশাল অংশ সামরিক খাতে বরাদ্দ থাকলেও পূর্ব পাকিস্তান এর সুফল সামান্যই পেত। ১৯৬৫ সালে কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঙ্গালীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

[সম্পাদনা]রাজনৈতিক অসমতা

জনসংখ্যার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রাখে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতার বন্টন পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূল হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তান "এক ইউনিট তত্ত্ব" নামে এক অভিনব ধারণার সূত্রপাত করে, যেখানে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ভোটের ভারসাম্য আনা। মজার ব্যাপার হল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাঞ্জাব প্রদেশ প্রস্তাব করে পাকিস্তানে সরাসরি জনসংখ্যার বন্টনের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হোক, কারণ পাঞ্জাবিরা ছিল সিন্ধি, পশতুন, বালুচ বা পাকিস্তানের অন্য যেকোন গোত্রের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। একেবারে শুরু থেকেই পাকিস্তানে শাসনের নামে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, আর এই ষড়যন্ত্রে মূল ভূমিকা পালন করে সামরিক বাহিনী। যখনই পূর্ব পাকিস্তানের কোন নেতা, যেমন খাজা নাজিমুদ্দিনমোহাম্মদ আলী বগুড়া, অথবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতেন, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানীরা কোন না কোন অজুহাতে তাদের পদচ্যুত করত। নানারকম টালবাহানা করে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেন এবং দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পাকিস্তানে তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের এই অনৈতিক ক্ষমতা দখল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েই চলে।

[সম্পাদনা]১৯৭০-এর সাইক্লোনের প্রতিক্রিয়া

১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর ভোলার সাইক্লোন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করে, সেই সাথে জোয়ারের কারণে প্রায় ৩,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও এটিকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হারিকেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারা মারা যায় খাবার আর পানির অভাবে। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীকার করে সরকার দুর্যোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারার কারণেই ত্রাণকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪শে নভেম্বর এক সভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে গৃহযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

[সম্পাদনা]১৯৭০-এর নির্বাচন

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতাজুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু'জন প্রধানমন্ত্রী। "এক ইউনিট কাঠামো" নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন:

  • অবিলম্বে মার্শাল ল' প্রত্যাহার করতে হবে।
  • সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
  • নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করতে হবে।
  • ২৫শে মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তোলে।

শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা কোন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বোনা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে কিন্তু বুলেটের ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালিদের রাজপথ থেকে সরানো যায় না। ৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

[সম্পাদনা]মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক

সারা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল, তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সাথে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসাবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙ্গালী বিচারপতি তাকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হন না। পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে। ১০ থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্স তাদের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে জরুরীভিত্তিতে "সরকারী যাত্রী" পরিবহণ করতে। এই "সরকারী যাত্রী"দের প্রায় সবাই ছিল শাদা পোশাকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সেনা। এমভি সোয়াত নামে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই একটি পাকিস্তানী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। কিন্তু বন্দরের নাবিক ও শ্রমিকেরা মালামাল খালাস করতে অস্বীকার করে। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের একটি দল বাঙ্গালী প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলী চালাতে অস্বীকার করে, যার মাধ্যমে শুরু হয় বাঙ্গালী সৈনিকদের বিদ্রোহ। অনেক আশা সত্বেও মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয় না। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে বাঙ্গালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান ক'রে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করে।

[সম্পাদনা]গণহত্যা ও জনযুদ্ধের সূত্রপাত

মূল নিবন্ধ: ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা

২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের গণহত্যাযজ্ঞ। এশিয়া টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী,[১১]

সামরিক বাহিনীর বড় বড় অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করে "তিরিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে হত্যা কর, তখন দেখবে তারা আমাদের হাত চেটে খাবে।" সে পরিকল্পনা মতোই ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তানী আর্মি অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সমাজ নিধন করা হয় এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের খবর যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে না পৌঁছায় সে লক্ষ্যে ২৫ মার্চের আগেই বিদেশী সাংবাদিককে ঢাকা পরিত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারপরও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান ক'রে ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে এই গণহত্যার খবর জানিয়েছিলেন। যদিও এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, বাঙালি হত্যা পুরো দেশজুড়ে চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের বিশেষ লক্ষ। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল - জগন্নাথ হল পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এতে ৬০০ থেকে ৭০০ আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের ঠান্ডা মাথার হত্যাকান্ডের কথা অস্বীকার করেছে তবে হামিদুর রহমান কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করেছিলো। জগন্নাথ হল এবং অন্যান্য ছাত্র হলগুলোতে পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞের চিত্র ভিডিওটেপে ধারণ করেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইন্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনলজি (বর্তমান বুয়েট) এর প্রফেসর নূরুল উলা। পুরো বাংলাদেশেই হিন্দু এলাকাগুলো বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মধ্যরাতের আগেই, ঢাকা পুরোপুরি জ্বলছিল, বিশেষভাবে পূর্ব দিকের হিন্দু প্রধান এলাকাগুলো। ২রা আগস্ট, ১৯৭১ টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, "হিন্দু,যারা মোট রিফিউজিদের তিন-চতুর্থাংশ, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল"।

[সম্পাদনা]স্বাধীনতার ঘোষণা

প্রচারপত্র এবং ক্ষুদ্র পুস্তক যুদ্ধের সময় জনমত চালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ঘোষণাটি চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ঘোষণাটি নিম্নরুপ:

অনুবাদ: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।[১২]

২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নানপ্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:

অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।[১৩][১৪]

১৯৭১ সালে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়।

[সম্পাদনা]অস্থায়ী সরকার গঠন

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার -এর আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার অন্তর্গত ভবেরপাড়া (বর্তমান মুজিবনগর) গ্রামে। শেখ মুজিবুর রহমান এর অনুপস্থিতিতে তাকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দীন আহমদ এর উপর।[১৫]বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেস্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে ২৬ মার্চ হতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

বিস্তারিতঃ ১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার

আগস্টের পরপরই বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। পাকিস্তানী সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে সামরিক স্থাপনা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়। গেরিলা হামলায় পাকিস্তানের চৌকষ সামরিক বাহিনীকে নাজেহাল করে তোলে স্বল্প দিনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলা যোদ্ধারা। এমনকি রাজধানী ঢাকায় ক্রাক প্লাটুন দুঃসাহসী সব অভিযান চালায়। ১৬ আগস্ট ১৯৭১ নৌ-কমান্ডোরা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা পাকিস্তানী যুদ্ধজাহাজ মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত হতে শুরু করে।

[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধ : জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কালপঞ্জি

ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানী বাহিনী ১০ এপ্রিলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিজেদের আয়ত্তে আনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এবং ছাত্র ও সাধারণ জনতা তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চট্টগ্রামে বাঙ্গালী সেনাবাহিনীর সদস্য ও ইপিআর এর সদস্যরা বিদ্রোহ করে শহরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে পাকিস্তানী বাহিনীকে যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করতে হয় এবং বিমান আক্রমণ চালাতে হয়।[১৬] কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর ইত্যাদি জেলাতেও বাঙ্গালী সেনারা বিদ্রোহ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানীরা বিপুলসংখ্যক সৈন্য ও অস্ত্রশত্রের বলে মে মাসের শেষ নাগাদ এসব মুক্তাঞ্চল দখল করে নেয়।

মার্চের শেষদিক হতেই পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের বিশেষভাবে তাদের রোষের শিকার হয়। দলে দলে মানুষ ভারত সীমান্তের দিকে পালাতে শুরু করে। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শরণার্থীদের এই স্রোত নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং এ সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

[সম্পাদনা]যুদ্ধক্ষেত্রের কাঠামো

Exquisite-kfind.png আরও দেখুন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টরসমূহের তালিকা

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল পরিকল্পনাহীন ও অপ্রস্তুত। ২৬মে মার্চ সারা দেশে প্রতিরোধ শুরু হয় এবং এপ্রিলের শুরুতেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু অস্ত্রপ্রাপতি ও প্রশিক্ষণ - এই দুই কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই পরিকল্পিত রূপ পেতে পেতে জুন মাস পার হয়ে যায়। ১১ জুলাই বাংলাদেশের সামরিক কমান্ড তৈরি করা হয়। কর্ণেল এম এ জি ওসমানীকে কমান্ডার ইন চিফ, লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আবদুর রবকে চিফ অফ আর্মি স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকারকেডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ ও চিফ অফ এয়ার ফোর্সের দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পাকিস্তান আর্মি থেকে পালিয়ে আসা অফিসারদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্যে একজন করে কমান্ডার নির্বাচন করা হয়। ১নং সেক্টর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল - জুন), মেজর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর) ২নং সেক্টর নোয়াখালী জেলাকুমিল্লা জেলার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবংফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর), মেজর এ.টি.এম. হায়দার (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

৩নং সেক্টর সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর),মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

৪নং সেক্টর সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত মেজর সি.আর. দত্ত ৫নং সেক্টর সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল মীর শওকত আলী

৬নং সেক্টর সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা উইং কমান্ডার এম.কে. বাশার ৭নং সেক্টর দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল,বগুড়ারাজশাহী এবং পাবনা জেলা মেজর কাজী নুরুজ্জামান

৮নং সেক্টর সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী(এপ্রিল- আগস্ট), মেজর এম.এ. মনজুর

(আগস্ট-ডিসেম্বর)

৯নং সেক্টর দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা মেজর এম.এ. জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর প্রথমার্ধ), মেজর জয়নুল আবেদীন (ডিসেম্বরের অবশিষ্ট দিন)

১০নং সেক্টর কোনো আঞ্চলিক সীমানা নেই। নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত

১১নং সেক্টর কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল মেজর আবু তাহের (আগস্ট-নভেম্বর), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)

টাঙ্গাইল সেক্টর সমগ্র টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার অংশ কাদের সিদ্দিকী

আকাশপথ বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার

১০ নং সেক্টরটি ছিল কমান্ডার ইন চিফের (সি-ইন-সি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে, যার মধ্যে নৌ-বাহিনী ও সি-ইন-সির বিশেষ বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৭]তবে উপযুক্ত কোন অফিসার ছিল না বলে ১১ নং সেক্টরের (নৌ সেক্টর) কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না; এ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যখন যে সেক্টরে অপারেশন চালাতেন, তখন সে সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের অধীনে থাকতেন।[১৮] মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল সীমান্ত এলাকায় এবং ভারতের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ লাভ করত। সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করার জন্যে তিনটি ব্রিগেড (১১ ব্যাটালিয়ন) তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্রায় ১,০০০ মুক্তিযোদ্ধাকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের ভেতরে নিয়মিত বিভিন্ন অপারেশনে পাঠানো হতো। আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় ইতিহাসিক হামলা, ইতিহাসে এ হামলা অপারেশন জ্যাকপট নামে পরিচিতI।


[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধ : অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরhduWcv ldjc

যুদ্ধের সময় সামরিক ইউনিট এবং সেনাদলের গতিবিধির নিদর্শন দেখাচ্ছে।

মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী বর্ডার পোস্টগুলো একে একে দখল করে নিতে শুরু করে। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনী কমলপুরবিলোনিয়াবয়রা প্রভৃতি বর্ডার পোস্টে হামলা করে এবং ৩০৭টি পোস্টের ৯০টিই দখল করে নেয়। পাশাপাশি গেরিলা বাহিনীর হামলাও তীব্রতর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর নিয়মিত কাজ ছিল সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করা এবং দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীদের নির্যাতন করা। সীমান্তে ও দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের জবাবে তারা এ অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে তারা দিনের বেলাতেও নিজেদের সামরিক ঘাঁটি থেকে বের হতে ভয় পেত। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জরুরী ভিত্তিতে ৫ ব্যাটালিয়ন সৈন্য তলব করা হয়।

[সম্পাদনা]ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ন্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তানসংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে যে 'ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।' পাঁচটা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারত ভূখণ্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে।[১৯] ৩রা ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাদানকালে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানের উল্লিখিত বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। অবিলম্বে তিনি দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠকের পর মধ্যরাত্রির কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, এতদিন ধরে "বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।"[২০] ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েযৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।৪ঠা ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু'ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু'ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে।[২১] যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। এর আগেই বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী বিমান বাহিনী পরাস্ত করে ঢাকার সকল সামরিক বিমান ঘাঁটির রানওয়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়। তৎকালীন পাকিস্তানী উর্ধ্বতন অফিসাররা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আশ্বাস পেয়েছিল উত্তরে চীন ও দক্ষিণে আমেরিকা থেকে তাদের জন্য সহায়তা আসবে, কিন্তু বাস্তবে তার দেখা মেলে না।

[সম্পাদনা]পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বিজয়

আত্মসমর্পণের দলিলে ভারতীয় লেট. জেন. জে. এস. অরোরা এবং পাকিস্তানী লেট. জেন. এ. এ. কে নিয়াজীর স্বাক্ষর।

ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ওভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ


পাকিস্তানী ইস্টার্ন কমান্ড সেনাবাহিনীর কমান্ডার, লে জেনারেল এ.এ.কে নিয়াজি, ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর চীফ, অফিসার পূর্ব থিয়েটার, লে জেনারেল জগজিৎ সিং অররার সামনে আত্মসমর্পনের নির্দশনপত্রে স্বাক্ষর করছেন, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

৯ ডিসেম্বর এক বার্তায় গভর্নর মালিক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে জানান, 'সামরিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। পশ্চিমে শত্রু ফরিদপুরের কাছে চলে এসেছে এবং পূর্বে লাকসাম ও কুমিল্লায় আমাদের বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে মেঘনা নদীর ধারে পৌঁছেছে। বাইরের সাহায্য যদি না আসে, তবে শত্রু যেকোনো দিন ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যাবে। পুনরায় আপনাকে বলছি, আশু যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক সমাধানের কথা বিবেচনা করুন।'এরপর ১০ ডিসেম্বর গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে 'আত্মসমর্পণের' আবেদন হস্তান্তর করেন।[২২]এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরো লেখা ছিল ,

'যেহেতু সংকটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই।'[২৩]

এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরদিন তা আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।[২৪]

মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা ঢাকা ঘেরাও করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পন করার জন্যে আহবান করে। গভর্ণর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন) বোমা ফেলার কারণে গভর্ণর মালেকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের পদলেহী সরকারও ইতিমধ্যে পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল (বর্তমানহোটেল শেরাটন) আশ্রয় নেয়। সময় থাকতে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে আকাশ থেকে অনবরত লিফলেট ফেলা হতে থাকে।

অবশেষে নিয়াজীর অনুরোধে ১৫ই ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ন'টা পর্যন্ত ভারতীয় বিমান আক্রমণ স্থগিত রাখা হয়। পরদিন সকালে বিমানাক্রমণ বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছু আগে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের প্রতিনিধি জন কেলীর মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও ছ'ঘণ্টার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে ভারতের একজন স্টাফ অফিসার পাঠানোর অনুরোধ জানান যাতে অস্ত্র সমর্পণের ব্যবস্থাদি স্থির করা সম্ভব হয়। এই বার্তা পাঠানোর কিছু আগে অবশ্য মেজর জেনারেল নাগরার বাহিনী কাদের সিদ্দিকী বাহিনীকে সঙ্গে করে মিরপুর ব্রীজে হাজির হন এবং সেখান থেকে নাগরা নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। নিয়াজীর আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত হওয়ার পর সকাল ১০:৪০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নাগরার বাহিনী ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাদি চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যেকব মধ্যাহ্নে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল চারটার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ান সৈন্য ঢাকা প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক সহস্র মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার জনবিরল পথঘাট ক্রমে জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে 'জয় বাংলা' মুখরিত মানুষের ভিড়ে। বিকেল চারটায় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার এবং ভারতের অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধিগণ ঢাকা অবতরণ করেন।কিছু পরেই ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে ভারতের পক্ষ থেকে এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। [২৫]

১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ. এ. কে নিয়াজী হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্খিত বিজয় ধরা দেয় যুদ্ধ শুরুর নয় মাস পর। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই সপ্তম নৌবহর প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণতম প্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।

[সম্পাদনা]জাতিসংঘে কূটনৈতিক তৎপরতা

৪ঠা ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহূত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবী সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হবার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা,ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোভিয়েট প্রতিনিধি এই প্রস্তাবকে 'একতরফা' বলে অভিহিত করে ভেটো প্রয়োগ করেন। পোল্যান্ডও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে।[২৬]পরদিন ৫ই ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদের পুনরায় যে অধিবেশন বসে তাতে সোভিয়েট ইউনিয়নের এক প্রস্তাবে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক 'রাজনৈতিক নিষ্পত্তি' প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘর্ষের অবসান নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এবং পাক-বাহিনীর যে সহিংসতার দরুন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে তাও অবলিম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন।একমাত্র পোল্যান্ড প্রস্তাবটি সমর্থন করে। চীন ভোট দেয় বিপক্ষে।অন্য সকল সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে। ঐ দিন আরও আটটি দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে আর একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এবার সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দ্বিতীয় ভেটো প্রয়োগ করে। একই সময়ে 'তাস' মারফত এক বিবৃতিতে সোভিয়েট সরকার 'পূর্ব বাংলার জনগণের আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে' সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের দাবী জানান, এই সংঘর্ষ সোভিয়েট সীমান্তের সন্নিকটে সংঘটিত হওয়ায় 'এর সঙ্গে সোভিয়েত নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, বলে উল্লেখ করে এবং পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে বিবদমান পক্ষদ্বয়ের যে কোনটির সঙ্গে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান।[২৭]

[সম্পাদনা]আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

৬ই ডিসেম্বরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় বাংলাদেশ সম্পর্কে কূটনৈতিক স্বীকৃতি। "বেলা এগারোটার সময় 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' মারফত ঘোষণা করা হলো যে ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, "বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে বলা যায়, গোটা বিশ্ব এখন সচেতন যে তারা জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক সরকারই যেমনটা দাবি করতে পারবে না। গভর্নর মরিসের প্রতি জেফারসনের বহু খ্যাত উক্তি অনুসারে বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত হচ্ছে 'পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত জাতির আকাঙ্ক্ষা বা উইল অব দ্য নেশন' দ্বারা। এই বিচারে পাকিস্তানের সামরিক সরকার, যাদের তোষণ করতে অনেক দেশই বিশেষ উদগ্রীব, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করে না।"[২৮]

৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি পত্র প্রেরণ করেন।বাংলাদেশ সরকারের ৪ ডিসেম্বরের পত্রের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে যে পত্র প্রেরণ করেন তার আংশিক বঙ্গানুবাদ নিম্নরূপ :

"সত্যের জয় হোক প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১ প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আপনি ৪ঠা ডিসেম্বর আমাকে যে বাণী প্রেরণ করেছেন তাতে আমি ও ভারত সরকারে আমার সহকর্মীবৃন্দ গভীরভাবে অভিভূত হয়েছি। এই পত্র পাবার পর আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পরিচালিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ ভারত সরকার পুনরায় বিবেচনা করেছে। আমি সানন্দে জানাই যে, বর্তমানে বিরাজিত পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি একটি অনুলিপি সংযুক্ত করছি। আপনার বিশ্বস্ত ইন্দিরা গান্ধী।" [২৯]


[সম্পাদনা]গণহত্যা

মূল নিবন্ধ: ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা চালানো হয়। ২৫শে মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শুরু করাঅপারেশন সার্চলাইট নামক ধ্বংসযজ্ঞ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত চলে এবং এ নয় মাসে বাংলাদেশি কিছু ঘাতক দোসরদের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ বাঙ্গালি হত্যা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এনাসাইক্লোপেডিয়া ও বইতে এই সংখ্যাটিকে ২,০০,০০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।[৮] বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করা হয়। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে, যারা সে সময় দেশত্যাগ না করলে হয়তো গণহত্যার শিকার হত।[৩০]

যুদ্ধের পরপরই রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে তোলা ছবিতে বুদ্ধিজীবীদের লাশ দেখা যাচ্ছে (সৌজন্যমূলক ছবি: রশিদ তালুকদার, ১৯৭১)

স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী[৩১] পাকিস্তান আর্মির নির্দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ জন বুদ্ধিজীবীকে - যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী - ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে।[৩২]পাকিস্তানের পদলেহী বাংলাদেশী বিশ্বাসঘাতক রাজাকারের দল ডিসেম্বরের শুরুতেই যুদ্ধের পরিণতি বুঝতে পেরে স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাBge ঘটায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ বন্ধ করে দেয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। ১৪ ডিসেম্বরে নিহত বুদ্ধিজীবীদের লাশ বিভিন্ন গণকবরে ফেলে আসা হয়, যার মধ্যে রায়েরবাজার বধ্যভূমিঅন্যতম (বর্তমানে এ বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে)। ঢাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু গণকবর ও বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং মাঝে মাঝেই এমন নতুন বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হচ্ছে (উদাহরণস্বরূপ ঢাকায় অবাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে একটি কূপের ভেতর গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়)।[৩৩] ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনসুলেটের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটস ডিপার্টমেন্টে পাঠানো টেলিগ্রামেও যুদ্ধশুরুর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সাধারণ জনতার ওপর চালানো নৃশংস হত্যাকান্ডের উল্লেখ রয়েছে।[৩৪]

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে বহুসংখ্যক বাঙ্গালি নারী সম্ভ্রম হারায়; যার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। বাংলাদেশে ধারণা করা হয় প্রায় ২,০০,০০০ নারী মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিত হয় এবং তাদের গর্ভে অনেকযুদ্ধশিশু জন্ম নেয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে পাকিস্তান আর্মি বহুসংখ্যক মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়, যাদের অধিকাংশই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ পরিবারের মেয়ে।[৩৫]

[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধ ও বিশ্বসমাজ

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্সন সরকার পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে সমর্থন প্রদান করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবদান ভারতের। শরণার্থীদের আশ্রয় দান, প্রবাসী সরকারে গঠনে সহায়তা এবং সর্বোপরি মুক্তিবাহিনীর সংগঠন, প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্র সরবরাহে ভারতের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ। ১৯৭১-এর শেষভাগে সোভিয়েত রাশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত হওয়ার পর[৩৬] ভারত সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করে যার ফলে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতিরিচার্ড নিক্সন মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে উল্লেখ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের কিছুই করার নেই বলে অভিমত প্রকাশ করেন।[৩৭] পাকিস্তানের পুরোনো বন্ধু চীন কৌশলগত কারণে যুদ্ধবিরতির জন্যে চাপ প্রয়োগ করেছিল। অন্যদিকে দীর্ঘ আলোচনার পর ৭ ডিসেম্বরজাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে আহবান জানায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। [৩৮]তবে বিশ্বজনমত ছিল পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষের পক্ষে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের বিষয়ে জাতিসংঘের অবহেলা ও নিস্পৃহতা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1.  "Gen. Tikka Khan, 87; 'Butcher of Bengal' Led Pakistani Army"The Los Angeles Times. 30 March 2002.
  2. ↑ ২.০ ২.১ India - Pakistan War, 1971; Introduction - Tom Cooper, Khan Syed Shaiz Ali
  3.  Pakistan & the Karakoram Highway By Owen Bennett-Jones, Lindsay Brown, John Mock, Sarina Singh, Pg 30
  4.  p442 Indian Army after Independence by KC Pravel: Lancer 1987 [ISBN 81-7062-014-7]
  5. ↑ ৫.০ ৫.১ Figures from The Fall of Dacca by জগজিত সিং অরোরা in The Illustrated Weekly of India dated 23 December 1973 quoted inIndian Army after Independence by KC Pravel: Lancer 1987 [ISBN 81-7062-014-7]
  6.  Figure from Pakistani Prisioners of War in India by Col S.P. Salunke p.10 quoted in Indian Army after Independence by KC Pravel: Lancer 1987 [ISBN 81-7062-014-7]
  7.  Daily Observer,Bangladesh, 11th January 1972,Dhaka,Bangladesh
  8. ↑ ৮.০ ৮.১ Matthew White's Death Tolls for the Major Wars and Atrocities of the Twentieth Century
  9.  Genocide in Bangladesh, 1971. Gendercide Watch.
  10.  পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত চতুর্থ মেয়াদী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য উপদেষ্টা প্যানেলের রিপোর্ট।
  11.  Debasish Roy Chowdhury (2005-06-23). 'Indians are bastards anyway'. প্রকাশক: Asia Times.
  12.  বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত
  13.  বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত
  14.  জিয়াউর রহমানের ঘোষণার অডিও (সাক্ষাৎকার - বেলাল মোহাম্মদ)
  15.  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (পৃষ্ঠা ১০-১১) - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
  16.  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (পৃষ্ঠা ৯) - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
  17.  Bangladesh Liberation Armed Force, Liberation War Museum, Bangladesh.
  18.  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (পৃষ্ঠা ১০) - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
  19.  http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-03/news/22848
  20.  http://www.profile-bengal.com/muldhara/Muldhara_71_chapter_21.htm
  21.  http://www.profile-bengal.com/muldhara/Muldhara_71_chapter_21.htm
  22.  http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-10/news/24409
  23.  http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-10/news/24409
  24.  http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-10/news/24409
  25.  http://www.profile-bengal.com/muldhara/Muldhara_71_chapter_21.htm
  26.  মূলধারা ৭১ গ্রন্থ অধ্যায় ২১
  27.  মূলধারা ৭১ গ্রন্থ অধ্যায় ২১
  28.  http://www.prothom-alo.com/detail/news/23563 দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত ধারাবাহিক নিবন্ধ
  29.  http://www.sangbad.com.bd/?view=details&pub_no=198&menu_id=23&news_type_id=1&type=single&val=18713 দৈনিক সংবাদ
  30.  Rummel, Rudolph J., "Statistics of Democide: Genocide and Mass Murder Since 1900"ISBN 3-8258-4010-7, Chapter 8, Table 8.2 Pakistan Genocide in Bangladesh Estimates, Sources, and Calcualtions: lowest estimate two million claimed by Pakistan (reported by Aziz, Qutubuddin. Blood and tears Karachi: United Press of Pakistan, 1974. pp. 74,226), all the other sources used by Rummel suggest a figure of between 8 and 10 million with one (Johnson, B. L. C. Bangladesh. New York: Barnes & Noble, 1975. pp. 73,75) that "could have been" 12 million.
  31.  Many of the eyewitness accounts of relations that were picked up by "Al Badr" forces describe them as Bengali men. The only survivor of the Rayerbazar killings describes the captors and killers of Bengali professionals as fellow Bengalis. See 37 Dilawar Hossain, account reproduced in 'Ekattorer Ghatok-dalalera ke Kothay' (Muktijuddha Chetona Bikash Kendro, Dhaka, 1989)
  32.  "125 Slain in Dacca Area, Believed Elite of Bengal"New York Times (New York, NY, USA): p. 1. 19 December 1971। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-01-04. "At least 125 persons, believed to be physicians, professors, writers and teachers were found murdered today in a field outside Dacca. All the victims' hands were tied behind their backs and they had been bayoneted, garroted or shot. They were among an estimated 300 Bengali intellectuals who had been seized by West Pakistani soldiers and locally recruited supporters."
  33.  DPA report Mass grave found in Bangladesh in The Chandigarh Tribune 8 August 1999
  34.  Sajit Gandhi The Tilt: The U.S. and the South Asian Crisis of 1971 National Security Archive Electronic Briefing Book No. 79 16 December 2002
  35.  East Pakistan: Even the Skies WeepTime Magazine, 25 October 1971.
  36.  সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সমর্থন প্রদান করে এবং মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করে। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করবে। সোভিয়েত রাশিয়া ভারতকে আশ্বাস দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই আলোকেই ১৯৭১ এর আগস্টে ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি সম্পাদিত হয়। আমেরিকা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করলে সোভিয়েত রাশিয়া এর জবাবে দু'টি সাবমেরিন পাঠায়।
  37.  ১৯৭১ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের প্রধানতম মিত্র এবং যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও বস্তুগত- উভয়ভাবেই সহায়তা করে। পাকিস্তানের অবশ্যম্ভাবী পরাজয় আঁচ করতে পেরে নিক্সন ইউএসএস এন্টারপ্রাইজকে বঙ্গোপসাগরে মোতায়ন করেন, যা ভারতীয়রা নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু করার হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে। এন্টারপ্রাইজ ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর গন্তব্যে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির জবাব হিসেবেসোভিয়েত নৌবাহিনী ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী দু'টি ডুবোজাহাজ ভ্লাডিভস্টক থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করে; যারা ইউএস টাস্ক ফোর্স ৭৪ কে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে তাড়া করে বেড়ায়।
  38.  আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ১২ ডিসেম্বর নিরাপত্তা কাউন্সিলের আরেকটি অধিবেশনের আহবান জানায়। তবে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে হতে এবং এতে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, যার ফলে এ অধিবেশনের কেতাবী গুরুত্ব ছাড়া আর কোন অর্থ থাকে না।

[সম্পাদনা]আরো দেখুন


[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেতনার উন্মেষকেন্দ্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে সশস্ত্র সংগ্রামেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অবিস্মরণীয়। একাত্তরের মার্চ মাসে পাকিস্তানের সামরিক ও আমলাচক্রের মুখপাত্র জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বাঙালিদের দমনের অভিযানঅপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]পঁচিশে মার্চ কালরাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণকারী পাকিস্তান বাহিনীতে ছিল ১৮ নং পাঞ্জাব, ২২ নং বেলুচ, এবং ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন। ২৫ মার্চের রাত থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত এ বিশেষ মোবাইল বাহিনী স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, ট্যাংক বিধ্বংসী বিকয়েললস রাইফেল, রকেট লাঞ্চার মার্টার ভারি ও হালকা মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে ফেলে। পশ্চিম দিক থেকে রেললাইন জুড়ে ৪১ ইউনিট, দক্ষিণ দিক জুড়ে ৮৮ ইউনিট এবং উত্তর দিক থেকে ২৬ ইউনিট কাজ শুরু করে[১]

[সম্পাদনা]শিক্ষক হত্যা

২৫শে মার্চের কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯ জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ নং নীলক্ষেতের বাড়িতে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলুর রহমানকে তার দুই আত্মীয়সহ হত্যা করা হয়। [২] ফজলুর রহমানের স্ত্রী দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পাক বাহিনী অধ্যাপক আনোয়ার পাশা (বাংলা) ও অধ্যাপক রাশিদুল হাসানের (ইংরেজি) বাড়িতেও প্রবেশ করে। উভয় পরিবার খাটের নিচে লুকিয়ে সেই যাত্রা প্রাণে বাঁচেন। ঘরে ঢুকে টর্চের আলো ফেলে তাঁদের কাউকে না দেখে হানাদাররা চলে যায়। উভয় অধ্যাপক সে রাত্রে বেঁচে গেলেও, মুক্তিযুদ্ধের শেষে তাঁরা আলবদর বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পারেননি, এমনকি বাড়ি পরিবর্তন করেও। ২৪নং বাড়িতে থাকতেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (নজরুল গবেষক ও বাংলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক)। সেই বাড়ির নিচে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ দুই মা তাদের শিশু সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়ায় সিঁড়িতে রক্ত ছিল। পাক সৈন্যরা ভেবেছিল, অন্য কোন দল হয়ত অপারেশন শেষ করে গেছে তাই তারা আর ঐ বাড়িতে ঢোকেনি। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন প্রাণে বেঁচে যান। ঐ বাড়িরই নিচতলায় থাকতেন এক অবাঙালি অধ্যাপক। পঁচিশে মার্চের আগেই সেই ব্যক্তি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার সব অবাঙালি পরিবার তা-ই করেছিলেন[৩]

ফুলার রোডের ১২নং বাড়িতে হানা দিয়ে হানাদাররা নামিয়ে নিয়ে যায় অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকিকে (সমাজ বিজ্ঞান)। তাঁকে গুলি করতে গিয়েও, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং উপরের তলার ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদিরকে গুলি করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ২৭শে মার্চ অধ্যাপক মুকতাদিরের লাশ পাওয়া যায় ইকবাল হলে (বর্তমান জহুরুল হক হল), তাকে পরে প্লটনে এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাফন করা হয়। সলিমুল্লাহ হল এবং ঢাকা হলে (বর্তমান শহীদুল্লাহ্‌ হল) হানা দিয়ে সলিমুল্লাহ হলের হাউস টিউটর ইংরেজির অধ্যাপক কে এম মুনিমকে সেনারা প্রহার করে এবং ঢাকা হলে হত্যা করে গণিতের অধ্যাপক এ আর খান খাদিম আর অধ্যাপক শরাফত আলীকে। জগন্নাথ হলের মাঠের শেষ প্রান্তে অধ্যাপকদের বাংলোতে ঢুকে তারা অর্থনীতির অধ্যাপক মীর্জা হুদা এবং শহীদ মিনার এলাকায় ইতিহাসের অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবীরের বাড়িতে ঢুকে তাঁদের নাজেহাল করে[৪]

জগন্নাথ হলে হামলা করার সময় আক্রান্ত হয় হলের প্রাক্তন প্রাধ্যক্ষ ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবের বাস ভবন। পাক হানাদাররা হত্যা করে অধ্যাপক দেব এবং তার পালিত মুসলমান কন্যা রোকেয়ার স্বামীকে। পরে জগন্নাথ হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়ার্টার, সেখানে হত্যা করা হয় পরিসংখ্যানের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তার পুত্র ও আত্মীয়সহ। আক্রমণে মারাত্বক আহত হন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা পরে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী চিৎবালী ও জনৈকা রাজকুমারী দেবী তথ্য প্রদান করেন যে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা চিনতে পেরে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে মর্গের কাছে গাছের নিচে খুব অল্প পরিসরে চিরদিনের জন্য শুইয়ে রেখেছেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হলে আরো নিহত হন হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। এ তথ্য যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক আনোয়ার পাশার মার্চ থেকে ডিসেম্বর নাগাদ লেখা আত্মজৈবনিক উপন্যাস রাইফেল রোটি আওরাত গ্রন্থে। [৪]

[সম্পাদনা]ছাত্র-ছাত্রী হত্যা

১৯৭১ এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলিতে "স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের" কর্মকান্ড পরিচালিত হত ইকবাল হল (পর সার্জেন্ট জহুরূল হক হল থেকে)। পাকিস্তানি অপারেশন সার্চ লাইটের ১নং লক্ষ্যবন্তু ছিল জহুরুল হক হল। ২৫ মার্চের মধ্যরাতের পূর্বে ছাত্র লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী হল ছেড়ে যান। সেদিন রাত থেকে ২৬ মার্চ সারা দিন রাত ঐ হলের উপর নীলক্ষেত রোড থেকে মার্টার, রকেট লঞ্চার, রিকয়েলস রাইফেল এবং ভারী মেশিন গান ও ট্যাংক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ পরিচালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এ মুনিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭১-৭২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, শুধু জহুরুল হক হলেই প্রায় ২০০ ছাত্র নিহত হন[৫]

রাত বারটার পর ইউওটিসি এর দিকের দেয়াল ভেঙ্গে পাকবাহিনী ট্যাংক নিয়ে জগন্নাথ হলের মধ্যে প্রবেশ করে এবং প্রথমেই মর্টার ছোড়ে উত্তর বাড়ির দিকে। সাথে সাথে অজস্র গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তারা ঢুকে পড়ে জগন্নাথ হলে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বাড়ির প্রতিটি কক্ষ অনুসন্ধান করে ছাত্রদের নির্বিচারে গুলি করে। সে রাতে জগন্নাথ হলে ৩৪ জন ছাত্র শহীদ হয়[৬]। জগন্নাথ হলের কিছু ছাত্র তখন রমনার কালী বাড়িতে থাকত। ফলে, প্রায় ৫/৬ জন ছাত্র সে রাতে সেখানে নিহত হয়। এদের মধ্যে শুধু অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র রমনীমোহন ভট্টাচার্য[৭] ব্যতীত অন্যদের নাম জানা যায় না। এছাড়া বহু সংখ্যাক অতিথিও নিহত হয় এদের মধ্যে ভৈরব কলেজের হেলাল, বাজিতপুর কলেজের বাবুল পাল, জগন্নাথ কলেজের বদরুদ্দোজা, নেত্রকোনার জীবন সরকার, মোস্তাক, বাচ্চু ও অমরের নাম জানা যায়। ১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকার মার্কিন কনসাল আর্চার কে ব্লাডের লেখা গ্রন্থ, "দি ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ" থেকে জানা যায় সে রাতে রোকেয়া হলে আগুন ধরানো হয়েছিল এবং ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হবার সময় মেশিন গান দিয়ে গুলি করা হয়। ২৬ মার্চ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম ও ৮৮ ইউনিটের মধ্যে যে কথোপকোথন হয় তা থেকে জানা যায় ক্যাম্পাসে প্রায় ৩০০ ছাত্র নিহত হয়[১]

[সম্পাদনা]কর্মচারী হত্যা

জহুরুল হক হল আক্রমণকারী বাহিনী ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রহরারত ইপিআর সদস্যদের পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। তারা শিক্ষকদের ক্লাব লাউঞ্জে আশ্রয়গ্রহণকারী ক্লাব কর্মচারী সিরাজুল হক, আলী হোসেন, সোহরাব আলি গাজী এবং আবদুল মজিদকে হত্যা করে। টিএসসিতে নিহত কর্মচারীরা ছিলেন আবদুস সামাদ, আবদুস শহীদ, লাড্ডু লাল। রোকেয়া হল চত্বরে নিহত হন আহমদ আলী, আবদুল খালেক, নমী, মো: সোলায়মান খান, মোঃ নুরুল ইসলাম্, মোঃ হাফিজউদ্দিন, মোঃ চুন্নু মিয়া এবং তাদের পরিবার পরিজন[৮]

যে বাহিনী শহীদ মিনার ও বাংলা একাডেমী আক্রমণ করে তারাই ঢাকা হল (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসে ও মধুসূদন দে'র বাড়িতে হামলা চালায়। সৈন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ নং বাড়ির বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেককে হত্যা করে। ২৩ নং নীলক্ষেত আবাসের ছাদে আশ্রয়গ্রহণকারী নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পালিয়ে আসা বাঙালি পুলিশ কর্মচারী, প্রেসিডেন্ট হাউস (পুরাতন গনভবন) প্রহরারত বাঙালি ইপিআর সদস্য এবং নীলক্ষেত রেল সড়ক বস্তি থেকে আগত প্রায় ৫০[৯] জনকে সৈন্যরা হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। ২৫ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে তিনটি ধর্মস্থান ধ্বংস ও ঐ সব স্থানে হত্যা যজ্ঞ চালায়। তিনটি স্থান ছিল, কলা ভবন সংলগ্ন শিখ গুরুদ্বার, রমনার মাঠে দুটি কালি মন্দির এবং শহীদ মিনারের বিপরীত দিকে অবস্থিত শিব মন্দির। সে রাতে আরো নিহত হয় দর্শন বিভাগের কর্মচারী খগেন দে, তার পুত্র মতিলাল দে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সুশীল চন্দ্র দে, বোধিরাম, দাক্ষুরাম, ভীমরায়, মনিরাম, জহরলালা রাজভর, মনভরন রায়, মিস্ত্রি রাজভর, শংকর কুরী[১০]

[সম্পাদনা]রোকেয়া হলে হামলা

১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকার মার্কিন কনসাল আর্চার কে ব্লাডের লেখা গ্রন্থ, "দি ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ" থেকে জানা যায় সে রাতে রোকেয়া হলে আগুন ধরানো হয়েছিল এবং ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হবার সময় মেশিন গান দিয়ে গুলি করা হয়। ১০ নভেম্বর ১৯৭১ সালের কতিপয় দুস্কৃতকারী অস্ত্র নিয়ে রোকেয়া হলে হামলা করে প্রায় দুই ঘণ্টা ৩০ জন ছাত্রীকে আটকে রাখে। তারা হলের প্রোভস্টের বাড়িতেও প্রবেশ করে[১১]। উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৭১ সালে রোকেয়া হলের প্রবেশপথের পাশে একটি শক্তিশালী পাকিস্তানি সামরিক অবস্থান ছিল[১২]। তাদের সহায়তা ব্যতিত নিছিদ্র ব্লাকআউট প্রহরা ও মোবাইল পেট্রোলিংকে ফাঁকি দিয়ে সশস্ত্র দুস্কৃতকারীদের রোকেয়া হলে দুই ঘণ্টা অপারেশন চালানো সম্ভব ছিল না।

[সম্পাদনা]বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

গভর্ণর টিক্কা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের ২১ এপ্রিল ও শিক্ষকদের ১ জুন থেকে কাজে যোগ দিতে আদেশ দেন। তার ঘোষণা মতে ২ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। স্বাভাবিক অবস্থা দেখানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার করার নামে ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, এবং জগন্নাথ হলের ঘরে ঘরে ছাত্রদের ফেলে যাওয়া বই পুস্তক, কাগজ পত্র, বিছানা পত্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন সকল পরীক্ষা স্থগিত ছিল। ঐ সময় ক্লাসে ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল খুব কম। প্রতিদিনই প্রায় কলাভবনে গ্রেনেড বিস্ফোরন হত। সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্লাসে ছাত্রদের উপস্থিতিও বাড়ে। ক্লাস করা ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায়, তারা গ্রেনেড ফাটিয়েই ক্লাসে ঢুকে যেত। ফলে, সেনাবাহিনী কাউকে ধরতে সক্ষম হত না। পাক সৈন্যরা ঐ সময় কলাভবনের বটগাছটি কেটে ফেলে এবং মধুর ক্যান্টিন উড়িয়ে দিতে যায়। উর্দুর অধ্যাপক আফতাব আহমদ সিদ্দিকী তাদের বাঁধা দিয়ে জানান, ১৯০৬ সালে ঐ ভবনে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল[১৩]

[সম্পাদনা]শিক্ষকদের গ্রেফতার, হুমকি ও শাস্তি প্রদান

মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে টিক্কা খান সরকার বন্দি করে। তদের মধ্যে ছিলেন ড. আবুল খায়ের, ড. রফিকুল ইসলাম, কে এ এম সালাউদ্দিন, আহসানুল হক, গিয়াসুদ্দিন আহমদ, জহুরুল হক এবং এম শহীদুল্লাহ। মার্শাল ল গভর্ণর লে. জেনারেল টিক্কা খানঅধ্যাপক মুনির চৌধুরীঅধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক এনামুল হককে লিখিত ভাবে সতর্ক করে দেন[১৪]। ড. আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে পদচ্যুত্য করা হয়[১৪]। ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে পদচুত্য করে ছয় মাসের আটকাদেশ দেওয়া হয়, তবে পাকিস্তান বাহিনী তাকে ধরতে পারে নি। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে তার অনুপস্থিতিতে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়[১৫]

[সম্পাদনা]ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপাচার্য বিহীন। ঐ সময় উপাচার্য ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দেশের বাইরেজেনেভাতে "জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্মেলনে" ছিলেন। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে জেনেভার পত্রিকায় ঢাকায় দুইজন ছাত্রের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে, বিচারপতি চৌধুরী পাকিস্তান প্রাদশিক শিক্ষা সচিবকে লিখিত ভাবের তার পদত্যাগ পত্র দেন এবং মানবাধিকার সম্মেলনে ছেড়ে লন্ডনে পৌছেন। তিনি বিদেশে প্রবাসী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিক মুজিবনগর গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তান বাহিনী তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনকে তাদের কনভয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বসান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয় ড. আবদুল বারীকে। এদের সহায়তা করেন ড. হাসান জামান, ড. মোহর আলী, ড. এ কে এম আবদুর রহমান, ড. আবদুল বারি(রাবি), ড. মকবুল হোসেন (রাবি), ড. সাইফুদ্দিন জোয়ারদার (রাবি)। এরা সকলেই টিক্কা খানের বিশ্ববিদ্যালয় "পুনর্বিন্যাস কমিটির সদস্য" ছিলেন। বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত "পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই" এই সংবাদের প্রতিবাদ করে বাঙালি শিক্ষাবিদ ড. সাজ্জাদ হোসায়েন এবং ড. মেহের আলীর একটি পত্র ১৯৭১ সালের ৮ জুলাই লন্ডন টাইমস্‌ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়[১৬]। উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন তার সহযোগী ড. মোহর আলী ও ড. হাসান জামান স্বাধীনতার পর গ্রেফতার হন এবং আটক থাকেন। ১৯৭৩ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়[১৭]

[সম্পাদনা]বুদ্ধিজীবি হত্যা, ১৪ ডিসেম্বর

শহীদ শিক্ষকদের নামপ্রতিষ্ঠান
গিয়াসউদ্দিন আহমেদঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ এ. এন. এম. মনিরুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এ. এন. মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ আবুল খায়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ সিরাজুল হক খানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাশীদুল হাসানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আনোয়ার পাশাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ জি. সি. দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ ফজলুর রহমানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডঃ ফয়জুল মহিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আব্দুল মুকতাদিরঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শরাফৎ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাদত আলীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এ. আর. খান খাদিমঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ সাদেক ইউনিভার্সিটি ল্যাবটরি স্কুল
অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডাঃ মোহাম্মদ মর্তুজাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার

[সম্পাদনা]আরও দেখুন

[সম্পাদনা]বহিঃ সংযোগ

[সম্পাদনা]তথ্য সূত্র

  1. ↑ ১.০ ১.১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ১৮৮
  2.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ১৯৩
  3.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ১৯৪
  4. ↑ ৪.০ ৪.১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ১৯৬
  5.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ২০৫
  6.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ১৯৭
  7.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:১৯৮
  8.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:১৯৪
  9.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:১৯৩
  10.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:১৯৭
  11.  দৈনিক ডন, নভেম্বর ১১, ১৯৭১
  12.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:২০৮
  13.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:২০৬
  14. ↑ ১৪.০ ১৪.১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা:২০৭
  15.  বাংলাপিডিয়া: আবদুর রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)
  16.  লন্ডন টাইমস্‌, জুলাই ৮, ১৯৭১
  17.  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর - অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম; পৃষ্ঠা:২০৭

No comments:

Post a Comment